ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ২:৪২:২১ পিএম

স্টারটেকের দুই বছরে ৭.১৮কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

৭ জুলাই, ২০২৪ | ৪:২৭ পিএম

স্টারটেকের দুই বছরে ৭.১৮কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

পণ্য কেনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকের বার্ষিক বিবরণীতে দেখানো হয়েছে; কিন্তু মূসক দাখিলপত্রে (ভ্যাট রিটার্ন) তা দেখানো হয়নি। মূলত মূসক (উৎসে মূসক) ফাঁকি দিতেই প্রতিষ্ঠান প্রকৃত ক্রয় গোপন করেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে উৎসে মূসক কর্তন করা হয়নি। মূসক ফাঁকি দেয়া প্রতিষ্ঠান হলো প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা বিক্রয়কারী স্টারটেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের দুই অর্থবছরে প্রায় ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি মূসক ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে ভ্যাট ঢাকা পশ্চিম কমিশনারেট। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের দাবি, ভ্যাট বিভাগের দাবি করা ভ্যাট তাদের লাভ থেকে সমন্বয় করা হয়েছে।

 

এনবিআর সূত্র মতে, স্টারটেক ঢাকাসহ সারাদেশে প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা বিক্রির শোরুম রয়েছে। এসব শোরুমে প্রযুক্তি পণ্য বিশেষ করে কম্পিউটার ও কম্পিউটার এক্সেসরিজ, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ইউপিএস, ক্যামেরা, সিকিউরিটি ক্যামেরা, সফটওয়্যার, টেলিভিশন, এসি প্রভৃতি খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিশেষ করে স্টারটেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় ভ্যাট ঢাকা পশ্চিম কমিশনারেটের আওতাধীন ভ্যাট মিরপুর বিভাগ।

 

প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বিবরণী (সিএ রিপোর্ট) যাচাই করে ভ্যাট বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছর বিভিন্ন সেবা ক্রয়ের বিপরীতে সঠিকভাবে উৎসে মূসক কর্তন করেনি। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি এন্টারটেইনমেন্ট, অফিস ভাড়া, ইন্টারনেট বিল, সফটওয়্যারে ব্যয়, পরিবহন খরচ, অফিস খরচ, পরিবহন রিপেয়ার অ্যান্ড মেইটেন্যান্স, প্রিন্টিং ও স্টেশনারি, পোস্টাল ও কুরিয়ার সার্ভিস, ফটোকপি, অডিট ফি, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, অফিস ডেকোরেশন, অফিস ফার্নিচার, অফিস সরঞ্জামসহ বিভিন্ন সেবার ওপর প্রযোজ্য উৎসে মূসক ৫৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯২ টাকা; যার মধ্যে ২৫ লাখ ৩১ হাজার ১৮২ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছর প্রযোজ্য উৎসে মূসক ৪১ লাখ ৯২ হাজার ৮৩০ টাকার মধ্যে ৩২ লাখ ৩ হাজার ৩২৭ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। অর্থাৎ এই দুই অর্থবছর মোট ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৯ টাকার উৎসে মূসক পরিশোধ না করা প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দিয়েছে।

 

একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছর প্রতিষ্ঠান মূসক দাখিলপত্রে পণ্য ক্রয় দেখিয়ে ১৭৭ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯৫ টাকা। কিন্তু ব্যাংক হতে প্রাপ্ত বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান ওই অর্থবছর ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৮৪ টাকা মূল্যের সমান অপ্রদর্শিত ক্রয় করেছে, যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৪৪ কোটি ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৩৬ টাকা। যার ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে প্রযোজ্য উৎসে মূসক ৩ কোটি ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৮ টাকা। এই দুই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠান ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১ টাকার পণ্য ক্রয় গোপন করেছে। এর মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৮৮ কোটি ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭২২ টাকা। যার ওপর মোট ৬ কোটি ৬১ লাখ ৮ হাজার ৭২৯ টাকার মূসক (সুদ ব্যতীত) ফাঁকি দেয়া হয়েছে। আর সেবা ক্রয়ের বিপরীতে ফাঁকি দেয়া হয়েছে ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৯ টাকা। দুই অর্থবছর মোট উৎসে মূসক ফাঁকি দেয়া হয়েছে ৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ২৩৮ টাকা (সুদ ব্যতীত)।

 

সূত্রমতে, ফাঁকি দেয়া মূসক পরিশোধে ভ্যাট ঢাকা পশ্চিম কমিশনারেট থেকে প্রতিষ্ঠানকে ৩ জুন দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। ২৩ জুন প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়। প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে জবাব দিয়েছে।

 

আমরা ইতোমধ্যে ৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ২৩৮ টাকা সমন্বয় করেছি। কিন্তু ওই ভ্যাট পরিশোধ আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য এবং আমাদের লাভ হতে সমন্বয় করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি উল্লেখ করতে চাই যে, বর্তমানে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় সাত হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত লিমিটেড কোম্পানি খুব কম রয়েছে। লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায় নিবন্ধিত উৎসে কর্তনকারী সত্ত¡া হিসেবে উৎসে ভ্যাট কর্তন শুধু লিমিটেড কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য। অন্যান্য ব্যক্তি মালিকানার জন্য ইহা প্রযোজ্য নয়।

স্টারটেকের দুই বছরে ৭.১৮কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি