ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১২:৫৭:৪২ পিএম

স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে ৫০০ কোটি ডলার

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০ পিএম

স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে ৫০০ কোটি ডলার

ছবি: সংগ্রহ

২০২৪ সালেও বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ প্রবাহ কমেছে। গত বছর এই খাতে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার কম এসেছে। ডলারের সুদের হার বেড়ে যাওয়া, টাকার মান কমে যাওয়ার শঙ্কা, বাংলাদেশের কান্ট্রি রেটিং কমিয়ে দেওয়া ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি ঋণে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকার কারণে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে মোট বিদেশি ঋণ এসেছে ২১.০৪ বিলিয়ন ডলার।

 

আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ২৫.৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, গত বছর সুদসহ ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল ২৩.১৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত বছর ঋণ পাওয়ার চেয়ে পরিশোধ হয়েছে ২.১২ বিলিয়ন ডলার বেশি। যদিও ২০২৩ সালেও ঋণ পাওয়ার চেয়ে ৪.৬৩ বিলিয়ন ডলার বেশি পরিশোধ হয়েছিল।

 

এতে বোঝা যায়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ঋণ পরিশোধের চাপ কম ছিল। বিদেশি উৎস থেকে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদের জন্য তহবিল ঋণ নেওয়াকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে ধরা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য আমদানিকারকরা বিদেশি ঋণদাতাদের থেকে ঋণ নেন, যা বায়ার্স ক্রেডিট নামে পরিচিত। আমদানি দায় পরিশোধে ব্যাংকগুলোও বিদেশি উৎস থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করে থাকে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার অনেক বেড়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা আগামীতে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। যে কারণে বিদেশি ঋণ সরবরাহকারীদের অনেকে এখন ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অন্যদিকে সুদহার ও বিনিময় হারের কারণে গত বছর ব্যবসায়ীদের অনেকে ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাননি। এসব কারণে বিদেশি ঋণ এসেছিল কম। বরং বিভিন্ন উপায়ে ডলার কিনে আগের ঋণ সমন্বয়
করা হয়েছিল।

 

করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণে বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার শূন্যের কাছাকাছি নামে। হুন্ডি বন্ধ থাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড ২৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। রপ্তানি বাড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে। বেশির ভাগ দেশে তহবিল পড়ে ছিল। অথচ বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে ওই সময়ই স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ বাড়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সস্তায় নেওয়া এসব বিদেশি ঋণ পরিশোধেই এখন বেশি মনোযোগী ব্যবসায়ীরা।

 

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১১.৭৯৩ বিলিয়ন ডলার। গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.১৩২ বিলিয়ন ডলার।

 

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা যেসব ঋণ নিয়েছি তা এখন পরিশোধ করে দিচ্ছি। এ জন্য পরিশোধের চাপে স্থিতি কমছে। আবার ঋণ আসছেও কম। ঋণ কম আসার কারণ হলো-বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চাচ্ছে না। কারণ দেশের রেটিং নেতিবাচক রয়েছে। আবার আমরাও নিচ্ছি না ডলার রেট ওঠা-নামা এবং ঋণ সুদহার বৃদ্ধির কারণে।

স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে ৫০০ কোটি ডলার