ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:৩৬:২৮ পিএম

১০ হাজার কোটির খেলাপিকে সালাম ঠুকতে হয়

৩ মে, ২০২৪ | ৯:৩৪ এএম

১০ হাজার কোটির খেলাপিকে সালাম ঠুকতে হয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, দেশের ঋণখেলাপি, কর খেলাপি আর অর্থ পাচার একই সূত্রে গাঁথা। ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণে ব্যাংকে বন্ডের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে অর্থ সরবরাহ করতে হচ্ছে। যার ফলে মূল্যস্ফীতি কমছে না। তাই শক্ত হাতে খেলাপি ঋণ বিষয়গুলো নীতিনির্ধারকদের বোঝানোর মতো একটা লোক প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘কনভারসেশন উইথ ইআরএফ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

 

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক এই গভর্নর। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবক্ষয় হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি একমত পোষণ করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবক্ষয়ের কথা শুনি তখন কষ্ট লাগে। অনেক নিয়ম হচ্ছে। কিন্তু নিয়মের ব্যাপারে ভূমিকা নিতে পারছে না। বিষয়গুলো নীতিনির্ধারকদের বোঝানোর মতো একটা লোক প্রয়োজন। ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন দরকার।

 

অর্থ পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, কেন যেন অর্থ পাচারের ব্যাপারে সরকার নীরব। তাদের তালিকা প্রকাশে সংসদে আলোচনা হয়। কিন্তু প্রকাশ করা হয় না। পাচার নিয়ে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নীরব। এটা দেশের জন্য ক্ষতিকর।


খেলাপি ওয়ালারা যদি অনেক বড় হয়ে যায় তা হলে সমস্যাও বড় হয়। মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য কৃষি ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে কৃষককে জেলে যেতে হয়। কিন্তু ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হলে তাকে সালাম ঠুকতে হয়। পাশে বসিয়ে চা খাওয়া হয়। এটা হতে পারে না। খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ঋণগুলো অবশ্যই আদায় করা উচিত।

 

মূল্যস্ফীতি নিয়ে সাবেক এই গভর্নর বলেন, কিছু অসাধু খাদ্য কর্মকর্তা ও মিল মালিক কারচুপি করছেন। যার ফলে দেশে খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। তাই চাইলেও সরকার খাদ্য বা খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছেন না।

 

ব্যাংক একীভূতকরণের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ দরকার আছে কি না সেটা বলতে হবে। একীভূত বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তবে এক ব্যাংকের সঙ্গে অন্য ব্যাংককে জোর করে একীভূত করে খারাপ ব্যাংককে ভালো করা যাবে না। একীভূত টেকওভার হতে পারে। তবে কোনো কিছুই জোর করা ঠিক না। যে দুটি ব্যাংককে একীভূত করা হবে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ব্যাংক বন্ধ হলে বোধ হয় আমানতের টাকা পাওয়া যাবে না। এটা ঠিক না। এমনটা হয় না। আমানতের ক্ষেত্রে যত প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করতে হবে।

 

আরেক প্রশ্নের জবাবে ফরাসউদ্দিন বলেন, ধনী গরিবের বৈষম্য আগেও ছিল। এখন ধনী গরিবের অর্থের পার্থক্য আগের তুলনায় বেড়েছে। বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। একটি দাতা মুরুব্বির পরামর্শে সরকার ৯২ সালে স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটাই ব্যাংকের বড় সমস্য। এ সমস্যার সমাধানের অনেক পথ রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের সার্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।

১০ হাজার কোটির খেলাপিকে সালাম ঠুকতে হয়