ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৪ জুন, ২০২৪ | ২:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
১১ মাসে রিজার্ভ থেকে নিট বিক্রি ৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার
১৪ জুন, ২০২৪ | ২:১১ পিএম
![১১ মাসে রিজার্ভ থেকে নিট বিক্রি ৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/06/14/20240614141137_original_webp.webp)
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) রিজার্ভ থেকে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮০ কোটি বা ৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন (১ হাজার ৩৩৮ কোটি) ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয় ৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন (৭৭৪ কোটি) ডলার। সব মিলিয়ে তিন অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে নিট ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন (৩ হাজার ৫৯ কোটি) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সময়ে বাজার থেকে কিছু ডলার কেনা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে সোয়াপ পদ্ধতির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন (৪৯৩ কোটি) ডলার সংগ্রহ করা হয়। ক্রয়কৃত ডলার বাদ দিয়ে রিজার্ভ থেকে নিট বিক্রির হিসাব করা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ, আমদানি দায় সমন্বয় এবং ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে গত মাসে বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১১০ থেকে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাজারের সঙ্গে ডলারের দর সমন্বয়ের প্রভাবে গত মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। রেমিট্যান্সে এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে চলতি মাসেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার পর্যন্ত মাসের প্রথম ১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন (১৪৬ কোটি) ডলার। আর মে মাসে ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন (২৫৩ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ঈদ উপলক্ষে দেশে সবসময়ই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। ১৭ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন হবে। এজন্য জুনের প্রথম দুই সপ্তাহে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ ভালো ছিল। এর প্রভাবে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১২ জুন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৫২ কোটি বা ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) ওইদিন গ্রস রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন (১ হাজার ৯২০ কোটি) ডলার। এ দুই হিসাবের বাইরেও নিট রিজার্ভের হিসাব রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণত এ হিসাব প্রকাশ করা হয় না। তবে আইএমএফকে গত মাসে জানানো হয়েছিল, দেশের ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
বিপিএম৬ পদ্ধতির হিসাব অনুযায়ী, ৫ জুন দেশে গ্রস রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রভাবে গত সপ্তাহে রিজার্ভের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০২১ সালের আগস্টে। ওই সময় গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপ কমে এসেছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরেই রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। রফতানি খাতও প্রবৃদ্ধির ধারায় আছে। বিপরীতে আমদানি ১৫ শতাংশের বেশি কমেছে। এ মুহূর্তে ঋণের কিস্তি কিংবা আমদানি দায় পরিশোধের তেমন কোনো চাপ নেই। রিজার্ভ থেকে এখন আর ডলার বিক্রির প্রয়োজন হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল মনে করেন, রিজার্ভের ক্ষয় ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নীতি গ্রহণে সময়ক্ষেপণ, অস্থিরতা ও আন্তরিকতার অভাবের ফল।
তিনি বলেন, ‘অনেক আগেই ডলারের বিনিময় হার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা দরকার ছিল। কিন্তু সেটির ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। এ কারণে দেশে অবৈধ হুন্ডির বড় বাজার তৈরি হয়ে গেছে। মানুষ এখন নগদ ডলার সংস্থানের পাশাপাশি আমদানির জন্যও হুন্ডি কারবারিদের খোঁজে। অন্যদিকে ঋণের সুদহার বেঁধে রাখার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়া হয়েছে। সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও অনেক দেরি হয়ে গেছে। উভয় ক্ষেত্রেই নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তরিক ছিল না। এ কারণে রিজার্ভের ক্ষয় ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।’
- ট্যাগ সমূহঃ
- রিজার্ভ
![১১ মাসে রিজার্ভ থেকে নিট বিক্রি ৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)