এ পথে রেললাইন নির্মাণে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা হয়নি। উদ্বোধনের পর দুই বছর রেললাইনটি দিয়ে কোনো ট্রেনই চলেনি। ২০২০ সালে ‘ঢালারচর এক্সপ্রেস’ নামে এক জোড়া ট্রেন চালু করা হয়। ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত চলে।
ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
১৫ বছরে রেলওয়ে প্রকল্পে খরচ হয় দের লাখ কোটি টাকা
৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:৩০ পিএম
![১৫ বছরে রেলওয়ে প্রকল্পে খরচ হয় দের লাখ কোটি টাকা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/03/20241103123041_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
আওয়ামী লীগের দেড় দশকে যেসব খাতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো তার মধ্যে অন্যতম ছিল রেলওয়ে। পৃথক রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, বছর বছর বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণসহ নানামুখী তৎপরতা ছিল এর প্রমাণ। সাড়ে ১৫ বছরে রেলের জন্য ৯০টি উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ব্যয় করা হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। এরপরও রেলের দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি।
আরও পড়ুন
এত বিনিয়োগের পরও বাড়েনি ট্রেনের গতি। উল্টো নতুন নির্মাণ করা বিভিন্ন রেলপথ বসে আছে অলস। নামমাত্র ট্রেন চলছে কয়েকটিতে। এতে ঋণের কিস্তি পরিশোধের অর্থও উঠছে না। উল্টো রেলের লোকসান বাড়াচ্ছে এসব রেললাইন। এর মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকায় নির্মিত পাঁচটি রেলপথে বর্তমানে চলছে মাত্র ২১টি ট্রেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে রেলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প পদ্মা সেতু রেলসংযোগ লাইন নির্মাণ। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছর রেলপথটির একাংশ চালু হয়েছে। চলতি মাসে এর পুরোটাই চালু হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ঠিকাদার নিয়োগের পর তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা (৪৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার)।
চীনের ঋণে জিটুজি (দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে চীন সরকার দিচ্ছে ২৬৭ কোটি ডলার, যা মোট ব্যয়ের ৫৮ শতাংশ। কঠিন শর্তের এ ঋণ ১৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। আর প্রকল্প ব্যয়ের বাকিটা বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করছে। প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল, নতুন এ রেলপথ পুরোপুরি চালু হলে প্রতিদিন ২৪ জোড়া বা ৪৮টি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে বর্তমানে এ পথে ১০টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নেয়া রেলের আরেক ব্যয়বহুল প্রকল্প হলো দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ শেষে গত বছর উদ্বোধন করা হয়েছে। এ অংশ নির্মাণে ব্যয় পড়েছে ১১ হাজার ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যদিও এ অংশের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেলপথটি নির্মাণে চার হাজার ১৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছিল।
চালুর প্রথম বছরই যাত্রী পরিবহন করে ৩৯২ কোটি টাকা এবং পণ্য পরিবহন করে ৫০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। অথচ উদ্বোধনের পর থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চালিয়ে মাত্র ৭০ কোটি টাকা আয় করেছে ট্রেন। এছাড়া কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইনটি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে এটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। তবে মিয়ানমারের অনাগ্রহে কক্সবাজার থেকে বাকি ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়েছে।
এদিকে মোংলা বন্দরকে কার্যকর করা, রেল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে পণ্য পরিবহন আয় বাড়ানো এবং ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট যোগাযোগ বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে নেয়া হয়েছিল খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। ভারতের ঋণে এ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় পড়ে চার হাজার ২২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। যদিও ২০১০ সালে নেয়ার সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা। উদ্বোধনের ছয় মাস পর গত মে মাসে খুলনা-মোংলা পথে একটি ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
অন্যদিকে জাতীয় চাহিদার কথা বাদ দিয়ে শুধু দুটি জেলার মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনের জন্য রাজবাড়ী থেকে টুঙ্গিপাড়া রুটে ৭৮ কিলোমিটার পুরোনো রেললাইন সংস্কার এবং ৪৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ মেইন ও আট কিলোমিটার শাখা লাইন নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেয়া হয় ২০১০ সালে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১০১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এর নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় দুই হাজার ১১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। কাজ শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের পাঁচ বছর পর, ২০১৮ সালে।
একইভাবে জাতীয় চাহিদা বাদ দিয়ে শুধু তৎকালীন পরিকল্পমন্ত্রী এ কে খন্দকারের আগ্রহে তার এলাকায় রেল সংযোগ স্থাপনে নেয়া হয়েছিল পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। ২০১০ সালে অনুমোদন দেয়া এ প্রকল্প ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। যদিও ২০১৮ সালে রেললাইনটির কাজ শেষ হয়। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৮৩ কোটি টাকা। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
![১৫ বছরে রেলওয়ে প্রকল্পে খরচ হয় দের লাখ কোটি টাকা](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)