ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:০৯:৫৪ পিএম

২০২৪ সালে সার আমদানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ

১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:৪২ এএম

২০২৪ সালে সার আমদানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ

ছবি: সংগ্রহীত

বিদায়ী বছরে দেশে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) মিলিয়ে মোট ৪৭ লাখ টন সার আমদানি হয়েছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৮ লাখ টন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে দেশে সারের আমদানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ।

 


দেশের কৃষি খাতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এ চার ধরনের সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কৃষি উৎপাদনে। তাই চাষাবাদ ও ফসলের উৎপাদন ঠিক রাখতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়।

 

 


দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে একদিকে সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে, অন্যদিকে ভর্তুকিও দিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরিয়ার চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পুরো সক্ষমতা থাকলেও সেটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না শুধু গ্যাস সংকটের কারণে।

 

 

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এক বছরের ব্যবধানে সার আমদানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। ২০২৪ সালে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি মিলিয়ে মোট ৪৭ লাখ টন সার আমদানি হয়েছে। এ পরিমাণ সারের কাস্টমস শুল্কায়িত মূল্য ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ লাখ ২৩ হাজার টন ইউরিয়া আমদানিতেই ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার টন টিএসপি, ৩ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকায় ১০ লাখ ২৮ হাজার টন এমওপি এবং ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকায় ১৪ লাখ ২৭ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করা হয়েছে।

 

 

 

এর আগে ২০২৩ সালে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি মিলিয়ে মোট ৩৮ লাখ টন সার আমদানি করা হয়। এ পরিমাণ সারের কাস্টমস শুল্কায়িত মূল্য ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ লাখ ৯৭ হাজার টন ইউরিয়া আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এছাড়া ২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায় ৪ লাখ ২০ হাজার টন টিএসপি, ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকায় ১১ লাখ টন এমওপি এবং ৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকায় ১০ লাখ ৬২ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করা হয়।

 

 

 

এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, সার আমদানিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের পুরোটাই আমদানি হয় বিসিআইসির মাধ্যমে। সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি চাইলে বছরের যেকোনো সময় সার আমদানি করতে পারে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে হয়। নির্বাচিত আমদানিকারক বিশ্ববাজার থেকে সার আমদানি করেন। তবে বিক্রি করতে হয় সরকার নির্ধারিত মূল্যে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ ভর্তুকি হিসেবে দেয় সরকার।

 

 

 

এদিকে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তাই কৃষিকাজে চাহিদা অনুসারে সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানিনির্ভরতা আরো বেড়েছে। সাম্প্রতিককালে বন্যাসহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পুনরায় ইউরিয়ার পাশাপাশি অন্য সারের চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সারের আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

 

 

 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) আহমেদ ফয়সল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের চাহিদা নিরূপণ করে তার ভিত্তিতেই সার আমদানি করা হয়। এখন পর্যন্ত বিসিআইসি, বিএডিসি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যে পরিমাণ আমদানি হয়েছে সেটা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঠিক আছে। তবে সাম্প্রতিক বন্যার কারণে একই জমিতে পুনরায় সারের চাহিদা তৈরি হয়েছে।’

 

 

 

সারের চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মার্চে দরপত্রের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরের সারের চাহিদা নিরূপণে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া আমাদের যতগুলো সার কারখানা আছে সেখানে যদি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় তাহলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব। গ্যাসের সরবরাহ কম থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সারের আমদানি বৃদ্ধি করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত আমদানি ও সরবরাহের পাইপলাইন ঠিক আছে।’

 

 

 

দেশে সরকারিভাবে ইউরিয়া সার উৎপাদনের জন্য পাঁচটি কারখানা রয়েছে। এগুলো হলো চট্টগ্রামের চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড, জামালপুরের যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড, সিলেটের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড ও নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ ফার্টিলাইজার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি।

 

 

 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো ৪০ হাজার টন এমওপি এবং ২৫ হাজার টন রক ফসফেট আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে ব্যয় হচ্ছে ২১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এজন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে আমদানিসংক্রান্ত আলাদা দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। রক ফসফেট আমদানির প্রস্তাব করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে টিএসপি সার উৎপাদনকারী দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড। টিএসপি সার উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল রক ফসফেট।

২০২৪ সালে সার আমদানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ