ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ১:২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
৩ কোটি টাকার বেশি টার্নওভারের ব্যবসার পণ্য, সেবায় ১৫% ভ্যাট চায় আইএমএফ
সরকার বৈশ্বিক দাতাসংস্থাটির এসব প্রস্তাব গ্রহণ করলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও নিত্যপণ্যের মতো যেসব খাত বর্তমানে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট প্রদান ও অব্যাহতির সুবিধা পাচ্ছে, তারা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আওতায় আসবে ব
২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ১:২ পিএম

ভ্যাট অব্যাহতি ও হ্রাসকৃত হারের সুবিধা প্রত্যাহার করে যেসব ব্যবসার টার্নওভার (বিক্রি) তিন কোটি টাকার ওপরে, তাদের সব ধরনের পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
গতকাল রোববার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন আইএমএফের বাংলাদেশ সফররত প্রতিনিধিরা। তাঁরা পোশাক, ফুটওয়্যার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ও মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য যত খাতে ভ্যাট অব্যাহতি ও হ্রাসকৃত হারের সুবিধা আছে সব বাতিল করার পরামর্শও দেন।
সরকার বৈশ্বিক দাতাসংস্থাটির এসব প্রস্তাব গ্রহণ করলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও নিত্যপণ্যের মতো যেসব খাত বর্তমানে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট প্রদান ও অব্যাহতির সুবিধা পাচ্ছে, তারা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডের সিনিয়র এক কর্মকর্তা।
আইএমএফ প্রতিনিধিদের সাথে সভায় উপস্থিত ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করবো। যেসব প্রস্তাব যৌক্তিক তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। "সংস্থাটি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা আমাদের দিয়েছে, বর্তমান কৌশলে আমরা ওই লক্ষ্যমাত্রার কাছেই রয়েছি। ফলে ঢালাওভাবে সব খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের যৌক্তিকতা আপাতত দেখছি না।"
এর আগে ২০১২ সালের ভ্যাট আইন হওয়ার সময় আইএমএফ সবক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের শর্ত দিয়েছিল। সরকারও শর্ত মেনে সে অনুযায়ী নতুন আইন পাশ করে। তবে ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে সরকারকে ওই অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়।
শেষপর্যন্ত ২০১৯ সালে ওই আইনের বেশকিছু সংশোধন করে, এবং ব্যবসায়ীদের দাবির বড় অংশ মেনে তা বাস্তবায়ন করতে হয়।
ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট
এনবিআরের সাবেক সদস্য, মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আইএমএফের প্রস্তাবের অধীনে ভ্যাট আরোপ করা হলেও ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট নেওয়ার সুযোগ থাকবে। "এর অর্থ হচ্ছে – কেবলমাত্র সংযোজিত মূল্যের ওপরই ভ্যাট কার্যকর হবে। কিন্তু এতে কমপ্ল্যায়েন্স নিশ্চিত হবে, অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা আসবে" - যোগ করেন তিনি।
যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট নিতে হলে কোনও ব্যবসায়ীদের সব ধরনের কাগজপত্র সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় অংশই এখনো অনানুষ্ঠানিক (ইনফরমাল), ফলে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই নিয়ম মানা সম্ভব হয় না।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, "আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ হলেও –কিছুক্ষেত্রে প্রকৃত করহার ৩৫ শতাংশের উপরে হয়ে যায়, কারণ ব্যবসায়ীরা ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট নিতে পারেন না।"
তিনি মনে করেন, এনবিআর কর্মকর্তারাই ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে চান না।
বর্তমানে ভ্যাটের হারসমূহ
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভ্যাটের স্ট্যান্ডার্ড রেট ১৫ শতাংশ। তবে বছরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ব্যবসাগুলো ভ্যাট-মুক্ত, এবং এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বরের (বিআইএন) জন্য নিবন্ধন নিতে হয় না। ৫০ লাখ টাকার উপরে কিন্তু ৩ কোটি টাকার নিচের টার্নওভারে ৪ শতাংশ ট্যাক্স রয়েছে। ৩ কোটি টাকার উপরে টার্নওভার হলে ব্যতিক্রম বাদে ভ্যাট ১৫ শতাংশ।
তবে এনবিআরের একটি বিশেষ আদেশে ২৭ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিআইএন নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে। যার ফলে ওইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখ টাকার নিচে টার্নওভার হলেও বিআইএন নেওয়া ও মাসে মাসে ভ্যাটের হিসাব বা রিটার্ন জমা দিতে হয়।
তবে এর বাইরে অন্তত ১০৫ ধরনের পন্য উৎপাদন ও সেবায় হ্রাসকৃত হার হিসেবে ১০%, ৭.৫%, ৫% হারে ভ্যাট আছে। এছাড়া ১৬ ধরনের পণ্য ও সেবার নির্দিষ্ট ভ্যাট আছে।
ব্যবসায় ভ্যাট ৫ শতাংশ, তবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আরো কিছু খাত ভ্যাট অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত হারে দেওয়ার সুবিধা পায়। রপ্তানি ও কৃষিখাতের বেশিরভাগই ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় রয়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভ্যাট নিবন্ধনধারী সাড়ে ৪ লাখ।
কর সীমা সংশোধন
বর্তমানে ব্যক্তি করদাতারা সাড়ে চার লাখ টাকা বা আয়ের এক-তৃতীয়াংশ – এর মধ্যে যেটি কম ওই পরিমাণ আয়ে কর অব্যাহতি পান। আইএমএফ এই অব্যাহতি তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এটি তুলে নিয়ে করমুক্ত আয়ের সীমা বিদ্যমান সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার কথা বলেছে।
এছাড়া রেমিট্যান্স, বিভিন্ন ধরনের বন্ড, জিরো কুপন বন্ড, শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইনে কর আরোপের পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ।
এছাড়া আইটি খাতের ২৭টি সেবার উপর কর আরোপ করার কথাও বলেছে। এসব কর কবে নাগাদ আরোপ করা হবে, এনবিআরের কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণও জানতে চেয়েছেন প্রতিনিধিরা।
কর্মকর্তারা জানান, আগামী বাজেটে এনবিআর কোন কোন খাতে কী ধরণের কর আরোপ করতে যাচ্ছে – কিংবা কোথায় কোথায় কর সুবিধা (ট্যাক্স এক্সপেনডিচার) কমিয়ে আনতে যাচ্ছে, তাও জানতে চেয়েছে।
তবে রাজস্ব নীতি গোপনীয় বিষয় হওয়ায় এনবিআর কর্মকর্তারা তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে চাননি।
৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে, বাংলাদেশকে কর অব্যাহতির যৌক্তিকীকরণ করে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তসমূহের বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো মূল্যায়নে বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে আইএমএফের একটি মিশন।
আইএমএফ মিশনের সদস্যরা এরমধ্যেই রাজস্ব বোর্ডের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস উইংয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সাথেও তাঁরা সভা করছেন।
