ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:১৮:৩৩ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

৩৭০ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে শেভরন ও কাতার গ্যাস

২০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:০ পিএম

৩৭০ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে শেভরন ও কাতার গ্যাস

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশের কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ বিপুল পরিমাণ পাওনা অর্থ বকেয়া পড়েছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের, যার পরিমাণ ২২০ মিলিয়ন ডলার। এ অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের মার্কিন জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে অন্তত ৭৫ মিলিয়ন ডলার অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধ করা প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।


একই দিনে কাতারের রাস লাফফান লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (কাতার গ্যাস বা কাতার এনার্জি নামে পরিচিত) কাছ থেকে আরেকটি চিঠি পায় জ্বালানি বিভাগ। বাংলাদেশের কাছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিক্রি বাবদ প্রতিষ্ঠানটির পাওনা ১৫০ মিলিয়ন ডলার। এ চিঠিতেও পাওনা অর্থ দ্রুত পরিশোধের তাগাদা দেয়া হয়েছে। মোট ৩৭০ মিলিয়ন ডলার পাওনা পরিশোধের অনুরোধসংবলিত চিঠি দুটির অনুলিপি এরই মধ্যে পেট্রোবাংলার কাছেও পাঠানো হয়েছে।


চিঠি দুটি হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শেভরন ও কাতার গ্যাস বিল পরিশোধে তাগাদা দিয়ে চিঠি দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী সপ্তাহে তাদের বকেয়া টাকা কিছু পরিশোধ করার। এর মধ্যে কাতারের গ্যাসের বকেয়া জরুরি ভিত্তিতে পরিশোধ করতে হবে।’

 

শেভরনের পাওনা অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে পাঠানো চিঠিতে সই করেছেন শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও এমডি এরিক এম ওয়াকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো ওই চিঠির তথ্য অনুযায়ী, গ্যাস বিক্রি বাবদ পেট্রোবাংলার কাছে শেভরনের মোট পাওনা জমেছে ২২০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিক্রীত গ্যাসের মূল্য ১৭৫ মিলিয়ন ডলার এবং বাকি ৪৫ মিলিয়ন ডলার জমেছে ভ্যাট ও সুদ হিসেবে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শেভরনের বকেয়া অনেক। আমরা চেষ্টা করছি তাদের এ বকেয়া পরিশোধ করে দিতে। তবে এ অর্থ একেবারে পরিশোধের মতো অবস্থা এখন নেই। তবে তারা যেটি দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে, জ্বালানি বিভাগ তা দ্রুত পরিশোধের চেষ্টা করছে।’

 

জিটুজি ভিত্তিতে কাতারের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করছে পেট্রোবাংলা। এ এলএনজির মূল্য বাবদ বকেয়া পড়ে যাওয়া ১৫০ মিলিয়ন ডলার দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে কাতার গ্যাস। এর মধ্যে কাতার গ্যাসের বকেয়া পরিশোধেই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলাসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

 

তাদের ভাষ্যমতে, জিটুজি চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট সময়ে বকেয়া পরিশোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পেট্রোবাংলা। সেটি করা না হলে সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় ঝুঁকি তৈরি হওয়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে।

 

আবার শেভরনের জরুরি ভিত্তিতে চাওয়া ৭৫ মিলিয়ন ডলারও দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে দিতে চায় জ্বালানি বিভাগ। দেশে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহে অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশের জোগান দিচ্ছে শেভরন। কোম্পানিটি বাংলাদেশে তিনটি গ্যাসফিল্ড পরিচালনা করছে। এগুলো হলো বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তোলন হচ্ছে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড থেকে।

 

পেট্রোবাংলাসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পেট্রোবাংলাকে গ্যাস সরবরাহ বাবদ শেভরনের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিল আসে ৪০ মিলিয়ন ডলারের মতো। কয়েক মাস ধরেই শেভরনের বিল বকেয়া জমেছে। গত ডিসেম্বরে শেভরন ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো বাংলাদেশ সফর করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যান। ওই বৈঠকে বকেয়া বিল নিয়েও আলোচনা হয়।

 

দেশে গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি পূরণে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে কাতার গ্যাসের কাছ থেকে কার্গোয় করে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে কম-বেশি ৪০ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করছে কোম্পানিটি। চলতি অর্থবছরও কাতার থেকে মোট ৪০ কার্গো এলএনজি আমদানির কথা রয়েছে। এর অর্ধেক এরই মধ্যে দেশে এসেছে।

৩৭০ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে শেভরন ও কাতার গ্যাস