ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:৩১:৫৭ পিএম

৪৫০ কোটি টাকার কর্ণফুলী রেস্ট হাউস, বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের

৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১:২৫ পিএম

৪৫০ কোটি টাকার কর্ণফুলী রেস্ট হাউস, বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের

ছবি: সংগ্রহ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়ায় নির্মিত ৪৫০ কোটি টাকার রিসোর্ট বা রেস্ট হাউসটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই রেস্ট হাউসটি বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

 

সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টানেল ও রিসোর্টের জন্য দৈনিক ব্যয় অনেক বেশি হলেও আয় কম হওয়ায় সরকারের জন্য এটি একটি ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হয়েছে।

 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কর্ণফুলী টানেলের দৈনিক পরিচালনা ব্যয় ৩৭.৪৪ লাখ টাকা, অথচ টোল থেকে আয় হচ্ছে মাত্র ১০.৫০ লাখ টাকা। ফলে প্রতিদিন প্রায় ২৬ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে।

 

এ বিষয়ে সেতু বিভাগের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, "কর্ণফুলী টানেল সার্ভিস এরিয়া রিসোর্টটি আমরা বেসরকারি খাতে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। দ্রুত দরপত্র আহ্বান করা হবে।" এর মাধ্যমে পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো রিসোর্টটি পরিচালনা করলে সরকারের লোকসান কমানো সম্ভব হবে।

 

কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্পটি ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩০টি বাংলো এবং একটি ভিভিআইপি বাংলো, যা বিশেষত প্রধানমন্ত্রী বা উচ্চপদস্থ মন্ত্রীর জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

 

তবে এটি উদ্বোধনের আগেই প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ যাত্রার কারণে রিসোর্টটি কার্যকর হয়নি। বর্তমানে, রিসোর্টে ৮০ জন আনসার সদস্য নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন, তবে সাধারণ মানুষের জন্য এর ব্যবহার নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই প্রকল্পের কারণে তাঁদের জীবিকা নির্বাহের উপায় সংকুচিত হয়ে গেছে। বহু মানুষ তাদের গবাদি পশু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ প্রকল্পের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প কাজের সুযোগ তৈরি হয়নি।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম জানান, কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্পটি ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর খরচ আগামী ৮-১০ বছরেও ওঠানো সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, "মিরসরাই শিল্পনগরী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হলে এই টানেল প্রকল্পটির কার্যকারিতা বেড়ে যেতে পারে, কিন্তু রিসোর্ট প্রকল্পটি একেবারে অপ্রয়োজনীয়।"

 

এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যধিক ব্যয় বহনকারী এই প্রকল্পটি সরকারের ওপর ঋণ এবং অতিরিক্ত খরচের বোঝা তৈরি করেছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক মন্তব্য করেছেন, "এই টানেল প্রকল্পের চেয়ে কম খরচে একটি সাসপেনশন ব্রিজ নির্মাণ করা যেত।"

 

সরকারের পক্ষ থেকে এখন রিসোর্টটি বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও এই প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে।

৪৫০ কোটি টাকার কর্ণফুলী রেস্ট হাউস, বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের