ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:০৪:০৪ এএম

৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা

২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০ পিএম

৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা

ছবি: সংগ্রহ

সব পণ্যের বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। একই সঙ্গে দোকান ব্যবসাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অন্তর্ভুক্তিসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা।

 

বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি ভ্যাট-ট্যাক্সের কারণে ভালো নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতারা। তারা বলেন, আগামীতে কী করে ভালো থাকব সেই চিন্তায় নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। অনেক দোকানেই বেচাকেনা নেই। ইতিমধ্যে অনেক দোকান বন্ধও হয়ে গেছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। দাবিগুলো হলো-সব পণ্যের বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত রেখে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শপিংমলে অবস্থিত দোকানসহ সব দোকানের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর করা। উৎপাদন বা আমদানি পর্যায়ে এমআরপি নির্ধারণ করে ভ্যাট আদায় করা। ঈদুল ফিতরের মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাসে ভ্যাট অভিযান পরিচালনা করা। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ব্যবসায়ীদের সুদ মওকুফ করে এক শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ১৫ বছরের কিস্তিতে এককালীন ঋণ পরিশোধের প্রজ্ঞাপন জারি করা। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণে দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং দোকান ব্যবসাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা।

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জিডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখা ৭০ লাখ দোকান ব্যবসায়ীরা প্রায় ২ কোটি লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। আমরা ভ্যাটবিরোধী নয়। তবে ভ্যাট আদায় সহজ করে এবং ভ্যালু অ্যাডেড শতকরা হার নির্ধারণ করে তার ওপর দোকান ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিতে চাই। কারণ, একজন ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ীর পক্ষে বর্তমান ভ্যাট আইন অনুযায়ী পাঁচটি খাতা সংরক্ষণ করে ভ্যাটের হিসাব নির্ণয় করা সম্ভব নয়। যদি তা করতে হয় তা হলে তাকে একজন অভিজ্ঞ লোক বা আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হবে। যা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার।

 

প্রায় ৭০ লাখ দোকান ব্যবসায়ীর বর্তমানে টিকে থাকাই যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে ভ্যাট বাড়ানোর কারণে দোকান ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ীরা সুদ বৃদ্ধির কারণে ঋণখেলাপিতে পরিণত হওয়ার পথে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ব্যবাসায়ীদের সুদ মওকুফ করে ১ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ১৫ বছরের কিস্তিতে এককালীন ঋণ পরিশোধের প্রজ্ঞাপন জারির দাবি করছি।

 

এ ছাড়া আইন অনুযায়ী ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ী ভ্যাটের আওতার বাইরে। কিন্তু এনবিআর সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শপিংমলে অবস্থিত দোকান ব্যবসাকে এর আওতাবহির্ভূত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। একই সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৩০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটের আওতার বাইরে রেখে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা পূর্বেও করেছি বর্তমানেও করছি। আমরা চাই প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন বা আমদানি পর্যায়ে এমআরপি নির্ধারণ করে ভ্যাট আদায় করা হোক।

 

এতে দোকান ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা ভ্যাট নামে হয়রানি থেকে মুক্ত থাকবেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ীরা বছরের ১০ মাস গড়ে যা বিক্রি করেন সে তুলনায় ঈদুল ফিতরের মাসে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়গুণ বেশি বিক্রি করে থাকেন। এই কারণে কিছু অসাধু ভ্যাট কর্মকর্তা ঈদুল ফিতরের মাসে ভ্যাট অভিযানের নামে দোকান ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে থাকেন। তাই আমরা ঈদুল ফিতরের মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাসে ভ্যাট অভিযান পরিচালিত করার দাবি করছি।
দোকান ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্তি না হওয়ার কারণে সব ধরনের ব্যাংক ঋণ ও সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

 

অতএব দোকান ব্যবসাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্তির জোর দাবি জানায় দোকান মালিক সমিতি। এ ছাড়া দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির পাঁচ দফা দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তারা।

 

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান মাহামুদ, ঢাকা মহানগর দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান টিপু, সমিতির নেতা আবু তাহের, আলী রেজা ও মো. শহিদুল্লা উপস্থিত ছিলেন।

৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা