ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:২০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
আ‘লীগের সময় বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: টিআইবি
৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:২০ এএম
![আ‘লীগের সময় বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: টিআইবি](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/03/20241103100505_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ব্যাংক খাত থেকে যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার কথা বলেছেন, বাস্তবে তার পরিমাণ অনেক বেশি। রাষ্ট্রকাঠামোকে ব্যবহার করেই পাচার হয়েছে এসব অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থপাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক ও ব্যবসায়িক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে অর্থপাচার ও দুর্নীতি বন্ধ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থপাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচার করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এ ত্রিমুখী আঁতাত মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। তিািন বলেন, ‘সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘসময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে; গত ১৫-১৬ বছরে যার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি। আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে। ফলে এসব জায়গায় কতটুকু পরিবর্তন আনা যাবে,
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওই সব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার বন্ধে সাপ্লাই (যে দেশ থেকে পাচার হয়) ও ডিমান্ড (যে দেশে পাচার হয়)Ñ উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞদের সিন্ডিকেট আছে। সে কারণে আমরা একজন সাবেক মন্ত্রীর কয়েকটি দেশে কয়েক শ অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে জানতে পারছি। কিন্তু এই ঘটনা বরফখণ্ডের চূড়ামাত্র, এমন পাচারকারী আরও অনেকে আছেন।’
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, অর্থপাচার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউÑ এসব প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পথনকশা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। অর্থপাচার রোধে বেশকিছু আইনেরও প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ছাড়া দুর্নীতি বন্ধে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
অস্বীকার করার উপায় নেই, ব্যাংকিং খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার জন্য এক নম্বর দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, বরং আর্থিক খাতের স্বচ্ছতার লক্ষ্যে গঠিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকেও (বিএফআইইউ) অর্থপাচারে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ‘গড়ে ওঠা সংস্কৃতি’ রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলোর মৌলিক সংস্কার তথা ঢেলে সাজানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েস্ট সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া এবং আর্থিক অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করায় এখন গুরুত্ব দিতে হবে। এসব উদ্যোগ নিলে পাচার হওয়া টাকার পুরোটা না হলেও কিছু অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এতে ভবিষ্যতে পাচার করার বেলায় সবাই সাবধান হয়ে যাবেন। তিনি বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তর ও অর্থ পাচারÑ উভয় পদ্ধতিতেই দেশ থেকে অর্থ সরানো হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়। অনুমান করা হয়, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে।
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইএমএফসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার দেওয়া ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা ছিল না। ঋণ দিলে সে অর্থ জনগণের কাজে আসবে না। এসব জানা সত্ত্বেও আইএমএফ সরকারকে কেন ঋণ দিয়েছিল, সে প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন। এসব ঋণের টাকা শুধু অপব্যবহারই হয়নি, তা দিয়ে সরকার গুলি কিনেছে, বারুদ কিনেছে এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করেছে। গত সরকারের সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে যত ঋণ নেওয়া হয়েছে ও ব্যয় করা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত করার দাবি জানান তিনি।
![আ‘লীগের সময় বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: টিআইবি](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)