ঢাকা শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ - ২:৪৫:৩৫ পিএম

ঋণের নামে লুটপাট থেমেছে, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা

৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৫:১১ পিএম

ঋণের নামে লুটপাট থেমেছে, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা

ছবি: সংগ্রহ

বিগত সরকারের আমলে দেশের ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠে এসেছে। এস আলম এবং কিছু বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করেছিল। বিশেষ করে ঋণের নামে অর্থ পাচার ও বিদেশে সম্পদ গড়ার ঘটনা সামনে এসেছে।

 

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

 

গত কয়েক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট ও ডলার সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০২৪ সালের প্রথম পাঁচ মাসে নয়টি ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা সরবরাহে ব্যর্থ হয়, যার ফলে ১৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দেয়। বিশেষত এস আলম গ্রুপের দখলমুক্ত ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকরা বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন।

 

 

এছাড়া, ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি (লাইসেন্সড কন্ট্রাক্ট) খুলতে পারছিলেন না, যার ফলে ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে। এই সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন, কিছু ব্যাংককে ঋণ দেওয়ার জন্য টাকা ছাপানো হবে না। তবে তিন মাস পর পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ২২ হাজার কোটি টাকা সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়।

 

 

২০২৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় – দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে এই পদক্ষেপে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। একই সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স বিষয়েও আলোচনায় আসে। বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে নগদ ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির অনুমোদন দেওয়া হলেও নগদের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।খেলাপি ঋণ ও রেকর্ড সংখ্যক খেলাপি ঋণ।

 

 

২০২৪ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল। বছরের পরের প্রান্তিক জুনে এটি ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় এবং সেপ্টেম্বর শেষে রেকর্ড ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছায়। এটি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ।

 

ডলার সংকটের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। এদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, বিশেষ করে আগস্ট মাসের পর থেকে প্রবাসীরা দেশে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১১৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।

 

 

বিগত সরকারের সময় এস আলম এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ব্যাংক খাতের দখল নিয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি করেছিল। সরকারের পতনের পর এসব গোষ্ঠী পতন ঘটেছে এবং ব্যাংকগুলোর মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন এসেছে এবং নতুন বোর্ড গঠন করে ব্যাংকগুলোকে পুনরায় চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে।

 

২০২৪ সালের ব্যাংকিং খাতে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং নতুন সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

ঋণের নামে লুটপাট থেমেছে, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা