ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:৪১ এএম
অনলাইন সংস্করণ
এনআরবি ব্যাংকের অস্থিরতা খেলাপি ঋণের বোঝা
৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:৪১ এএম

ছবি: সংগ্রহ
বিগত শেখ হাসিনা সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছিল। চতুর্থ প্রজন্মের এসব ব্যাংক বর্তমানে ব্যাংক খাতের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকমই একটি ব্যাংক এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড।
অর্থনীতিবিদরা ঢালাওভাবে এত ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছেন সবসময়, কিন্তু কারও কোনো কথা না শুনে ব্যাংক খোলার নামে অর্থ পাচার ও অর্থ লোপাটের সুযোগ করে দিয়েছে বিগত সরকার। ঠিক একইভাবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের নানা অনিয়মের কারণে নাজুক অবস্থায় পড়েছে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনায়ও নানারকম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে। নামে-বেনামে ঋণ বিতরণ করায় তা আদায় হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন বছর ব্যাংকটিতে কোনো খেলাপি ঋণ না থাকলেও ২০১৬ সাল থেকে আগ্রাসী ব্যাংকিং করায় খেলাপি ঋণের খাতায় নাম লিখিয়েছে ব্যাংকটি। ওইসময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মোট বিতরণকৃত ঋণের ১ দশমিক ৯ শতাংশ। যা বর্তমানে কয়েকগুণ বেড়ে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ হয়েছে। জানা যায়, বৈধপথে প্রবাসীদের আয় দেশে আনার শর্তে শতভাগ প্রবাসীদের মালিকানায় ২০১২ সালে এই ব্যাংকটির অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা ব্যাংকটির প্রথম প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন ইকবাল আহমেদ।
তিন বছর পর ঘটনাক্রমে, ২০১৬ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন বিশিষ্ট প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান। এই পরিবর্তনের পর ইকবাল আহমেদসহ অনেক মূল প্রতিষ্ঠাতাকে ব্যাংকের পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে নামে-বেনামে ব্যাংকটির শেয়ার কেনেন মাহতাবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে ব্যাংকটিতে তার পরিবারের ৫ জন সদস্য সরাসরি পরিচালক হিসেবে আছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যাংকটি থেকে অর্থ সরিয়ে তা পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। এতে ব্যাংকটির স্বাস্থ্যও দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে।
ত্রখন বর্তমান চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমানের একক কর্তৃত্বে ব্যাংকটি পরিচালিত হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থেরও অবনতি হয়। প্রথম তিন বছর ব্যাংকটিতে কোনো খেলাপি ঋণ না থাকলেও ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো মোট বিতরণকৃত ঋণের ১ দশমিক ৯ শতাংশ ঋণখেলাপি হয়ে যায়। ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরপর থেকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। এরপর সেটি কিছুটা কমে ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ সালের শেষে তা আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সবশেষ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যেখানে ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৫৯০ কোটি টাকা। কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৭৯ কোটি টাকা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছেন। আপাতত আর কোনো ব্যাংকের পর্ষদ ভাঙার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে এনআরবি ব্যাংকের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে নিশ্চয়ই সেটি তদন্ত সাপেক্ষে বিবেচনা করা হবে।
