ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:৩১:১২ পিএম

গত অর্থবছরের ঋণ পরিশোধের বোঝা বর্তমান সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

২১ অক্টোবর, ২০২৪ | ১:২৩ পিএম

গত অর্থবছরের ঋণ পরিশোধের বোঝা বর্তমান সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

ছবি: সংগ্রহ

হাসিনা সরকারের ঋণ পরিশোধের চাপে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ এসেছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রো রেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগাপ্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় বেড়ে গেছে পরিশোধ। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৫ কোটি ডলার।

 

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ এই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ৮৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল।

 

যার মধ্যে শুধু আসল পরিশোধই বেড়েছে ৩১ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরে কমে গেছে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি।

 

অথচ মেট্রো রেল বাদে পদ্মা রেল সংযোগ ও কর্ণফুলী টানেল থেকে তেমন রিটার্ন আসছে না, যা আয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি মেনটেইন্যান্সে খরচ হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে নিজের তহবিল থেকে এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

 

ইআরডি সূত্রে জানা জায়, বিদায়ি অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ৩৩৫ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬৮ কোটি ডলার বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে সরকারকে এত ঋণ পরিশোধ করতে হয়নি। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬৭ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল সরকার।

 

এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে দুই কোটি ৭৪ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রতিশ্রুতি কমেছে ২৮৫ কোটি ডলার।

 

ইআরডি কর্মকর্তারা বলেছেন, গত সরকারের সময় করা ঋণচুক্তির প্রস্তাবগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে পর্যালোচনা করছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে না।

 

কর্মকর্তারা আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বহুপক্ষীয় এবং বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ ও বাজেট সহায়তার প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে।

 

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কোনো ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। তবে অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে দুই কোটি ৭৪ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে অনুদান পাওয়া গিয়েছিল ৯ কোটি পাঁচ লাখ ডলার এবং ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ২৭৯ কোটি ডলার। ঋণ ও অনুদান মিলে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ২৮৮ কোটি ডলার।   

 

প্রকল্প প্রস্তুত ও কাজের অগ্রগতি না হওয়ার কারণে ঋণের প্রতিশ্রুতি এবং অর্থছাড় কমেছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলন, প্রকল্প আওতায় অর্থছাড় হয়ে থাকে কাজের অগ্রগতির ওপর। যেহেতু এই দুই মাস আন্দোলনের কারণে কাজ হয়নি, তাই ঋণের অর্থছাড়ও কম হয়েছে। কাজের অগ্রগতি বাড়লে অর্থছাড়ও বাড়বে।

  

জানা গেছে, বাংলাদেশকে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য উচ্চ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট বেড়েছে। বর্তমানে এসওএফআর ৫ শতাংশের বেশি, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির আগে ১ শতাংশের এর কম ছিল। আবার বাংলাদেশের বাজারভিত্তিক ঋণও ক্রমাগত বাড়ছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এখন সুদ বাবদ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

গত অর্থবছরের ঋণ পরিশোধের বোঝা বর্তমান সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ