ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৬ জুলাই, ২০২৪ | ৯:৩৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ
চিনিকলের আধুনিকায়নে সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এস আলম গ্রুপের
৬ জুলাই, ২০২৪ | ৯:৩৬ এএম
![চিনিকলের আধুনিকায়নে সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এস আলম গ্রুপের](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/07/06/20240706093553_original_webp.webp)
দেশের চিনিশিল্পের রুগ্নদশা কাটাতে আখ উৎপাদন ও চিনিকলের আধুনিকায়নে সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগ্রুপ এস আলম অ্যান্ড কো.। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) এবং শিল্প মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এজন্য বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত আখ উৎপাদন ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক আখ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তোলা, ৬ মেগাওয়াট পাওয়ার কো-জেনারেশন, অ্যাগ্রো-ভোলটিক সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ, বাই-প্রোডাক্টভিত্তিক প্ল্যান্ট তৈরি, কোল্ড স্টোরেজ ও অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তোলা, প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ ইত্যাদি। দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ ও ফরিদপুরের চিনি কল অঞ্চলে ওই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে।
জানা যায়, উচ্চ মানসম্পন্ন আখ উৎপাদনে উদ্যোগ নেবে এস আলম অ্যান্ড কো.। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি যৌথভাবে কাজ করবে বিএসএফআইসি, বিএসআরআই এবং আন্তর্জাতিক গবেষকদের সঙ্গে। বিভিন্ন হাইব্রিড জাত উদ্ভাবনে ব্যবহার করা হবে ক্লোনিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আধুনিক প্রযুক্তি। একইসঙ্গে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ ছাড়া এস আলম অ্যান্ড কো. দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনি কলে ১ হাজার ২৫০ টিসিডি সক্ষমতার একটি আধুনিক আখ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তুলবে, যেটির সক্ষমতা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টিসিডি পর্যন্ত বর্ধিতযোগ্য এবং ফরিদপুর চিনিকলে ১ হাজার টিসিডি সক্ষমতার একটি আধুনিক আখ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তুলবে, যেটির সক্ষমতাও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টিসিডি পর্যন্ত বর্ধিতযোগ্য।
এখান থেকে প্রতিবছর ১২ হাজার টন প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ব্রাউন সুগার উৎপাদিত হবে। যা পরে বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি বছর ১৫ থেকে ১৮ হাজার টন হবে। যেহেতু সারা বছর ধরে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু না রাখলে সেখান থেকে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব নয়, তাই একটি চিনি শোধনাগার প্রতিষ্ঠা করবে এস আলম অ্যান্ড কো.। যার মাধ্যমে চাহিদা থাকলে (সিজনে) বছরে প্রায় ৯০০ টিপিডি আমদানিকৃত কাঁচা চিনি এবং কম চাহিদার সময় (অফ সিজনে) ১ হাজার টিপিডি কাঁচা চিনি পরিশোধন করা সম্ভব হবে।
অধিকন্তু, চিনি কারখানা, চিনি রিফাইনারি এবং অন্যান্য প্ল্যান্ট, ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটাতে তৈরি করা হবে ৬ মেগাওয়াট বা এর বেশি সক্ষমতার পাওয়ার প্ল্যান্ট। এক্ষেত্রে বয়লার জ্বালানি হিসেবে আখের অবশিষ্ট অংশ বা ছোবড়া ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ডুয়েল ফুয়েল বয়লার ব্যবহার করা হতে পারে, যেখানে জ্বালানি হিসেবে কয়লারও ব্যবহার থাকবে।
পাশাপাশি সেতাবগঞ্জ এ ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এবং ফরিদপুরে চিনিকল অঞ্চলে ১০ মেগাওয়াট সক্ষমতার অ্যাগ্রো-ভোলটিক সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করবে এস আলম অ্যান্ড কো.। তাতে যথাক্রমে ৪০০ একর ও ৪০ একর ভূমির প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন শস্য এই সোলার প্ল্যান্ট প্রকল্পের আওতায় উৎপাদন করা হবে। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পর সোলার প্ল্যান্টের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যুক্ত করা হবে জাতীয় গ্রিডে।
চিনিকলে বিভিন্ন বাই-প্রোডাক্ট থাকে যেমন, মোলাসেস, ফিল্টার প্রেস মাড ও ছাই। মোলাসেস বিক্রি করা হবে কেরু অ্যান্ড কো. এর কাছে। অন্যান্য বাই-প্রোডাক্ট এর জন্য সে অনুযায়ী প্ল্যান্ট নির্মিত হবে। এ ছাড়া সোলার প্ল্যান্ট ও দিনাজপুর ও ফরিদপুর এলাকার মৌসুমি শস্যের সংরক্ষণ প্রয়োজন হবে। তাই ২০ হাজার টন সক্ষমতার কোল্ড স্টোরেজ নির্মিত হবে সেতাবগঞ্জ ও ফরিদপুর এর চিনিকল অঞ্চলে।
সেতাবগঞ্জ চিনিকল ও ফরিদপুর চিনিকলকে লাভজনক উদ্যোগে রূপান্তর করতে পণ্য বহুমুখীকরণ অপরিহার্য। দিনাজপুর ও ফরিদপুর অঞ্চলে শাকসবজি ও ফলমূলের প্রাচুর্য রয়েছে, যা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ উপস্থাপন করে। এস আলম অ্যান্ড কো. এর পরিকল্পনায় হিমায়িত, টিনজাত, ডিহাইড্রেটেড এবং আচারযুক্ত শাকসবজি প্রক্রিয়াকরণ-উৎপাদনে একটি উদ্ভিজ্জ প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া টিনজাত ফলের শাঁস, ফলের রস, মিশ্র ফলের রস এবং বিভিন্ন ধরনের ফল থেকে শুকনো ফল উৎপাদন, হিমায়িত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলুর চিপস, স্টার্চ, পাস্তা, নুডলস, স্যুপ, হিমায়িত খাবার, টিনজাত খাবার, আচার, সিরিয়াল এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতের পরিকল্পনাও রয়েছে এস আলমের।
প্রস্তাবিত কারখানাগুলোতে পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের পিপি ব্যাগ, এলডিপিই প্যাকেট ও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজিং প্রয়োজন হবে। তাই সেতাবগঞ্জ ও ফরিদপুর দুই জায়গাতেই একটি করে প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি স্থাপন করবে এস আলম। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে এসব কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা নির্ধারণ করা হবে।
টেকসই কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি, স্থানীয় অর্থনীতির পালে হাওয়া দিতে ও দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করতে এস আলম অ্যান্ড কো. এর এসব বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এই উদ্যোগের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন: শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা; শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশন) এস এম আলম; শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. শামীমুল হক; বিএসএফআইসি এর সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার এবং বিএসএফআইসি এর চেয়ারম্যান শেখ শোয়েবুল আলম এনডিসি।
এ ছাড়া এস আলম অ্যান্ড কো. এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, প্রতিষ্ঠানটির ডিরেক্টর বেলাল আহমেদ, ডিরেক্টর আশরাফুল আলম, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ), সুব্রত কুমার ভৌমিক, এফসিএ; উপদেষ্টা মো. আরিফুর রহমান অপু; অ্যাকাউন্টস, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, মো. মনিরুজ্জামান, এফসিএ; অ্যাকাউন্টস, এজিএম মো. নজরুল ইসলাম, এসিএ; এসএস পাওয়ার ১ লিমিটেডের ম্যানেজার, টেকনিক্যাল সার্ভিস নাগিব মাহফুজ প্রমুখ।
- ট্যাগ সমূহঃ
- চিনিকল
- এস আলম গ্রুপ
![চিনিকলের আধুনিকায়নে সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এস আলম গ্রুপের](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)