ঢাকা বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫ - ৫:০৯:১৬ এএম

ছয় মাসে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার অবরুদ্ধ করেছে দুদক

৫ মার্চ, ২০২৫ | ১২:৩৯ পিএম

ছয় মাসে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার অবরুদ্ধ করেছে দুদক

ছবি: সংগ্রহ

আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, মন্ত্রী, এমপি ও ব্যবসায়ীদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। গত ছয় মাসে আদালতের নির্দেশে এসব প্রভাবশালীদের দেশে-বিদেশে থাকা প্রায় ১০,৪৭৫.৮৬ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

 

দেশের অভ্যন্তরে সম্পদ ক্রোক দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট ৭৬৫.৭৫ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—১৯১ একর জমি (৬৯০.৮১ কোটি টাকা), ২৮টি বাড়ি, ৩৮টি ফ্ল্যাট, ১৫টি প্লট, ৬টি দোকান, ২৩টি গাড়ি, ১টি ট্রাক, ৩টি জাহাজ, ৩টি কোম্পানি ও ৫২টি বাণিজ্যিক সংগঠন।

 

 

অন্যদিকে, দেশে থাকা ৯৫৪৪.৫০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— ৮৭১৩.৭৬ কোটি টাকার শেয়ার, ৮১৭.১৪ কোটি টাকার ১০৩০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সঞ্চয়পত্র, নগদ অর্থ, স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিও হিসাব, বিদেশে সম্পদ জব্দ।

 

 

গত ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশে থাকা ১৬৫.৬১ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এতে রয়েছে— ৫৮২টি ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্থাপনা, ২৩টি কোম্পানির অধীনে বিনিয়োগকৃত ৮.৮৮ লাখ ডলার ও ৮৬.২০ লাখ ইউরো, বিদেশি ব্যাংকে থাকা ৭.১৩ লাখ ডলার ও ২৮.৬৯ লাখ ইউরো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাদের দিকে নজর।

 

 

দুদক জানিয়েছে, ক্রোক ও অবরুদ্ধ হওয়া সম্পদের বেশিরভাগই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি ও ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের মালিকানায় রয়েছে। বিদেশে ক্রোক হওয়া ৫৮২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৫৮০টির মালিকানা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের।

 

 

এছাড়া, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপ, সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জান্নাত আরা হেনরীসহ একাধিক নেতার সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

 

 

বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার-এর সম্পদও জব্দ হয়েছে।

 

 

দুদক বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় এসব অবৈধ সম্পদ চিহ্নিত করেছে।

 

 

এ পর্যন্ত শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং অনেক সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, "এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"

 

 

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হলেও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে।"

ছয় মাসে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার অবরুদ্ধ করেছে দুদক