ঢাকা শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫ - ৮:০০:৫৮ পিএম

বৈধ বিনিয়োগ ছাড়াই : সিঙ্গাপুরের ধনীদের তালিকায় আজিজ খান

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১:৫ পিএম

বৈধ বিনিয়োগ ছাড়াই : সিঙ্গাপুরের ধনীদের তালিকায় আজিজ খান

ছবি: সংগ্রহ

সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ২০১৮ সালেই নাম লিখিয়েছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। কয়েক বছর ধরেই সে দেশে তার সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে। যদিও দেশে অনেকটা উল্টো পথেই হাঁটছে তার অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার। কোম্পানিটির মুনাফা কয়েক বছর ধরে কমছে। এরপরও সিঙ্গাপুরে আজিজ খানের সম্পদ বৃদ্ধির রহস্য কী তা পরিষ্কার নয়।

 

 দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর বা ভারতে সামিট গ্রুপের বৈধ কোনো বিনিয়োগ নেই। সরকারের সব মহলই বিষয়টি জানে। এরপরও সিঙ্গাপুর ও ভারতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করছে সামিট। আর এ কাজ করেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন আজিজ খান।

 

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা আজিজ খান। তার বয়স বর্তমানে ৬৯ বছর। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক এবং আবাসন ও অবকাঠামো খাতে ব্যবসা আছে সামিট গ্রুপের। সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের  অধীনে সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ ব্যবসার পাশাপাশি ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এবং এলএনজি টার্মিনালসহ সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি রয়েছে। ভারতে রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর ব্যবসা।

 

সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় গত বছর টানা ষষ্ঠবারের মতো নাম ওঠে মুহাম্মদ আজিজ খানের। তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় এক দশমিক ১২ বিলিয়ন বা ১১২ কোটি ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১২০ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় তার সম্পদের পরিমাণ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এর আগে ২০২২ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার, ২০২১ সালে ৯৯ কোটি ডলার ও ২০২০ সালে ৯৫ কোটি ডলার।

 

সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিএনএ ডিজিটালে তথ্য অনুযায়ী, এক বন্ধুর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেছিলেন আজিজ খান। বন্ধু তখন বাংলাদেশে পাইকারিভাবে প্লাস্টিক আমদানি করছিলেন। আজিজ খান নিজেও একপর্যায়ে সার রপ্তানি শুরু করেন।ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আজিজ খানকে বিভিন্ন বন্দরে অপেক্ষা করতে হতো। তার প্রধান কারণ ছিল বিদ্যুৎ সংকট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী হন তিনি। ১৯৯৭ সালে আজিজ খান প্রতিষ্ঠা করেন সামিট পাওয়ার।

 

যদিও সামিট পাওয়ারের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। ২০০৯ সালে এ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সময় ৩৩ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি কেন্দ্র ছিল সামিট পাওয়ারের। বর্তমান সামিট পাওয়ার লিমিটেডের হোল্ডিং কোম্পানি সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের অধীনে চালু ও নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতা দুই হাজার ২৫৫ মেগাওয়াট। এছাড়া সামিট পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) মাধ্যমে আরও ২৭৭ মেগাওয়াট সক্ষমতা রয়েছে সামিটের পোর্টফোলিওতে।

 
বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ও সামিটের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের দ্বিতীয় এফএসআরইউ ও এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে সামিটের। এর এলএনজি স্টোরেজ সক্ষমতা এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এবং রিগ্যাসিফিকেশন সক্ষমতা দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট। মহেশখালীতে আরও একটি এফএসআরইউ ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

এর বাইরে কোম্পানিটির সিঙ্গাপুরভিত্তিক সাবসিডিয়ারি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট পিটিই লিমিটেড আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ করে। চট্টগ্রাম, মুক্তারপুর ও কলকাতার বন্দর ব্যবসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে এ সাবসিডিয়ারি। ভারতের পাটনায়ও একটি বন্দর উন্নয়নের কাজ পেয়েছে সামিট, যা এখন নির্মাণাধীন। আবাসন খাতের ব্যবসার সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট রয়েছে সামিট গ্রুপ।

 

বাংলাদেশের বাইরে ভারতের ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের শেয়ার কিনেছে সামিট। ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার কিনেছে সামিট ইন্ডিয়া (ত্রিপুরা)। অথচ সামিটের দেশের বাইরে বৈধ কোনো বিনিয়োগ নেই বলেই জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাহলে এসব বিনিয়োগ কীভাবে করল সামিট, তার কোনো উত্তর সরকার নিজেই জানে না। যদিও ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) প্রকাশিত অফশোর লিকস ডেটাবেইজে আজিজ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম আসে। তবে আজিজ খান সে সময় টাকা পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেন সংবাদমাধ্যমের কাছে।

 

এ বিষয়ে সামিটের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। তবে সামিটের এ ধরনের কোনো অনুমোদন নেই। তারা কীভাবে এ বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক জানে না। তবে তারা বিষয়টি কখনও জানার চেষ্টাও করেনি। কারণ সরকারের ওপর মহলে নিষিদ্ধ ছিল সামিটের বিষয়ে তদন্ত। 

 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা শেয়ার বিজকে বলেন, এখন ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় যে ঘটনা তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এটা আগে সফল করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে ভবিষ্যতে অন্যান্য খাতের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনায় নেই।

বৈধ বিনিয়োগ ছাড়াই : সিঙ্গাপুরের ধনীদের তালিকায় আজিজ খান