ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১২ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:১৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
রফতানিতে বড় ধাক্কা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:১৭ এএম
![রফতানিতে বড় ধাক্কা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/12/20241012101742_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে রফতানি খাত। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলে রফতানি খাত থেকে মোট আয় হয়েছিল ৫৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল সাড়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলার। রফতানির এই আয় থেকেই সচল থাকে অর্থনীতির চাকা। অথচ দেশের এই রফতানি খাতই ভালো নেই। বহুমুখী সংকটে পড়ে রীতিমতো ধুঁকছে রফতানি আয় আনা দেশের প্রায় সব খাত। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এখনও একটি সংকট কাটতে না কাটতে হাজির হচ্ছে আরেক সংকট। এতে করে স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে রফতানি বাণিজ্য।
বিদায়ি সরকারের আমল থেকেই চলে আসা টানা অস্থিরতায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিগত টানা প্রায় দুই মাস শ্রমিক আন্দোলনে বড় ক্ষতি হয়েছে প্রধান রফতানি পণ্য গার্মেন্টস শিল্পের। আগের সরকার গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও শিল্পে চাহিদামাফিক মিলেনি গ্যাস-বিদ্যুৎ। ওই অবস্থা এখনও অব্যাহত। দেশে ডলার সংকটও ভয়াবহ আকার ধারণ করে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে, সে সংকট এখনও কাটেনি। ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে শিল্পের কাঁচামাল ও মেশিনারিজের। নানা কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এই অবস্থার মধ্যেই বিগত সরকারই শিল্প খাতের সরকারি প্রণোদনা কমিয়ে দেয়। এতে সক্ষমতা হারাচ্ছে দেশের শিল্প খাত।
এভাবে ধারাবাহিক সংকটের কারণে ধাক্কা লেগেছে রফতানি আয়ে। দেশের রফতানি বাণিজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো মাত্র তিন দিন আগে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই- সেপ্টেম্বর) রফতানি আয়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে প্রধান খাত তৈরি পোশাক থেকে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি গত বছরের প্রথম তিন মাসের অর্ধেকেরও কম। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। সুতরাং সবশেষ তিন মাসে পোশাক রফতানি বাড়লেও গত বছরের তুলনায় বেশ কম।
এই রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে দেশটিতে ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে এই বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক। তৈরি পোশাকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা এখন ৯ শতাংশ। অর্থাৎ পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রেও পোশাক রফতানি কমে গেছে।
শুধু পোশাক রফতানি নয়, অধিকাংশ পণ্যের রফতানি আয় কমে গেছে। ইপিবির সর্বশেষ প্রকাশিত রফতানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে হিমায়িত মাছ রফতানি কমেছে ৫৩.৯২ শতাংশ, সিমেন্ট রফতানি কমেছে ৪৮.৯৫ শতাংশ, সবজি রফতানি কমেছে ৪৮.৩২ শতাংশ, ড্রাই ফুড রফতানি কমেছে ২৪.১৩ শতাংশ, চামড়া রফতানি কমেছে ১৯.০৩ শতাংশ, পাট ও পাটপণ্য রফতানি কমেছে ১৭.৭৪ শতাংশ এবং ওষুধ রফতানি কমেছে ১৩.৪৪ শতাংশ। এ ছাড়াও আরও প্রায় ২০টির বেশি পণ্যের রফতানি আয় কমে গেছে।
রফতানিকারকরা বলছেন, দেশে একের পর এক সংকটের কারণেই রফতানি খাত চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘একটা সংকট কাটতে না কাটতেই আরেক সংকট হাজির হচ্ছে। বিগত কয়েক মাস দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর শ্রমিক আন্দোলন আমাদের বড় ক্ষতি করে দিয়েছে। এর বাইরে এখন সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট। কারখানা চালাতে যেখানে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ পিএসআই গ্যাসের দরকার হয়, সেখানে দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস একেবারেই মিলছে না, অর্থাৎ শূন্য পিএসআই গ্যাস থাকছে। এর ফলে দিনের অধিকাংশ সময় কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকছে। বিকল্প উপায়ে অল্পবিস্তর উৎপাদন হলেও তা দিয়ে সময়মতো ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানো যাচ্ছে না। এতে করে অনেক ক্রেতা অন্য বাজারে রফতানি আদেশ সরিয়ে নিচ্ছে। এখন গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রফতানি আদেশ অন্য দেশে চলে যাচ্ছে বহুমুখী সংকটে উৎপাদন করতে না পারায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা বাজার আরও হারাব।’
এদিকে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ সময়ের আলো বলেন, ‘ব্যাংকের ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতেও এখন অনেক সমস্যা হচ্ছে। এটিও এখন উদ্যোক্তাদের জন্য বড় বাধা। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে আমরা সময়মতো কাঁচামাল আমদানি করতে পারছি না। এত সংকটের মাঝে বিগত সরকার শিল্পের প্রণোদনা কমিয়ে দিয়ে আমাদের পথচলা আরও কঠিন করে দিয়েছে।’
- ট্যাগ সমূহঃ
- রফতানি
![রফতানিতে বড় ধাক্কা](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)