ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩ আগস্ট, ২০২৪ | ১০:৩৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ
রাজস্ব আদায়ে ডিএসসিসি যেভাবে সফল
৩ আগস্ট, ২০২৪ | ১০:৩৩ এএম
![রাজস্ব আদায়ে ডিএসসিসি যেভাবে সফল](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/08/03/20240803103311_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
রাজস্ব আদায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সলফতা বাড়ছে। বছর শেষে করপোরেশনের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত চার বছরে ক্রমান্বয়ে ডিএসসিসির রাজস্ব আদায় বেড়েই চলেছে। এক সময় যে করপোরেশন ঠিকভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারতো না, পাওনাদারের বকেয়া পরিশোধ করতে পারতো না, সেই সিটি করপোরেশন এখন রাজস্ব আদায়ে সাফল্য অর্জন করে নিজস্ব অর্থায়নে নতুন নতুন বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
রাজস্ব আদায়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঠিক কতোখানি সফল তা বিগত পাঁচ বছরের রাজস্ব আদায়ের চিত্র দেখলে সহজেই অনুমান করা যাবে। ডিএসসিসির নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দক্ষিণ সিটি রাজস্ব আদায় করেছে ৫১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেড়ে ৭০৩ কোটি ৩১ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৮৭৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরে আগের সব মাইলফলক অতিক্রম করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের নতুন ইতিহাস গড়তে সমর্থ হয়েছে ডিএসসিসি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ভ্যাট ট্যাক্স না বাড়িয়ে আয়ের উৎস বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি।
চার বছরের ব্যবধানে গৃহকরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২২০ শতাংশ
বিগত অর্থবছরে যে সব খাত থেকে ডিএসসিসি সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করেছে তার মধ্যে অন্যতম গৃহ কর (হোল্ডিং ট্যাক্স)। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে ৪০০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, যা করপোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গৃহ কর বাবদ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪৭ কোটি ২৩ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২৪ কোটি ৪০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫৪ কোটি ৮৫ লাখ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮২ কোটি টাকা আদায় করে দক্ষিণ সিটি।
সুতরাং, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাপেক্ষে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এ খাতে আদায় বেড়েছে ৫৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাপেক্ষে বিগত অর্থবছরে দ্বিগুণের বেশি গৃহ কর আদায় করা হয়েছে। শতাংশের বিচারে প্রবৃদ্ধির এই হার প্রায় ২২০ শতাংশ।
অন্যদিকে গত অর্থবছরে বাণিজ্য অনুমতি (ট্রেড লাইসেন্স) বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাণিজ্য অনুমতি খাতে রাজস্ব আদায় ৫৫ কোটি টাকা ছিল। সুতরাং চার বছরের ব্যবধানে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
চার বছরে বিভিন্ন ইজারা খাতে আয় বেড়েছে কয়েকশ’ গুণ
কোরবানি উপলক্ষে অস্থায়ী ও স্থায়ী পশুর হাটের ইজারা থেকে গত অর্থবছরে আয় হয়েছে ২৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২৩ কোটি ৬০ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৩ কোটি ১৭ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৮৪ লাখ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে এ খাতে প্রায় ৪৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার, ভাগাড় ইত্যাদি ইজারা থেকে গত অর্থবছরে ২৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা আয় করেছে ডিএসসিসি। এ খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫ কোটি ১৯ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ কোটি ২৩ লাখ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাত্র ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। সামষ্টিকভাবে চার বছরের ব্যবধানে এ খাতে আয় বেড়েছে সাড়ে ৫শ’ শতাংশের চেয়েও বেশি।
বাজার সালামি খাতে গত অর্থবছরে ডিএসসিসি ১৪৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করতে সমর্থ হয়েছে। এ খাতে ২০২২-২৩, ২০২১-২২, ২০২০-২১ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে যথাক্রমে আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৩৯ কোটি ৯৮ লাখ, ১০৯ কোটি ৪৭ লাখ, ৩৮ কোটি ২৮ লাখ ও ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাপেক্ষে বিগত অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় পাঁচ গুণ।
এছাড়াও স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৩২ কোটি ২৭ লাখ ও স্থায়ী আমানতের সুদ থেকে ৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উল্লিখিত খাতগলো থেকে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪৩ কোটি ১৬ লাখ ও ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উল্লেখ, ২০২০-২১ অর্থবছরের আগের বছরগুলোতে স্থায়ী আমানতের সুদ থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল শূন্য।
একইভাবে রাস্তা খনন ফিস খাতে গত অর্থবছরে ৬২ কোটি ৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। তাছাড়া, ডিএসসিসি বিয়ে, তালাক, দত্তক গ্রহণ ও জিয়াফত বা ভোজের ওপর কর খাত থেকে গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ৯ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিএসসিসির সমাপনী স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের সমাপনী স্থিতি কিংবা চলমান অর্থবছরের প্রারম্ভিক স্থিতিতেও করপোরেশনের ইতিহাসে এটি নতুন আরেকটি মাইলফলক।
রাজস্ব আদায়ে সফলতা ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়
রাজস্ব আদায়ে ডিএসসিসির সফলতার বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোনও রকমের করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিগত চার বছরে আমরা কোনও খাতে কোনও কর বৃদ্ধি করিনি। বরং এ সময়ে নতুন ২৫টি খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ১৪টি নতুন খাত থেকে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে আয়ের খাত বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ এবং বকেয়া কর আদায়ের মাধ্যমে আমরা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।’
রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘গত চার অর্থবছরে সড়ক, অবকাঠামো, জলাবদ্ধতা নিরসন, সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র, গণশৌচাগার ইত্যাদি কার্যক্রমে অবকাঠামো নির্মাণ, উন্নয়ন ও সংস্কার এবং সংসদ সদস্য ও কাউন্সিলরদের চাহিদা অনুসারে জনকল্যাণে যে সব উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে ২০২০-২১ সালে ১২১ কোটি ৮৫ লাখ, ২০২১-২২ সালে ৩০৯ কোটি ৪৪ লাখ, ২০২২-২৩ সালে ৩৯০ কোটি ১৬ লাখ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৫৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উল্লিখিত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাপূর্ণ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় এবং ঢাকাবাসী ও গণমাধ্যমের সমর্থনে আমরা সে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি, সফল হয়েছি।’
রাজস্ব আদায় কতটুকু চ্যালেঞ্জিং ছিল সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়িত মেয়র হানিফ উড়ালসেতুর আয় থেকে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ডিএসসিসি রাজস্ব পাওয়ার কথা থাকলেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি দায়িত্বভার গ্রহণের আগে এ খাত থেকে করপোরেশন কখনোই আয় করতে পারেনি বা করেনি। দায়িত্বভার গ্রহণের পর ২০২০-২১ অর্থবছরে মেয়র হানিফ উড়ালসেতু থেকে সিটি করপোরেশন প্রথমবারের মতো ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়। বিগত ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাত থেকে আদায়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮ কোটি ২ লাখ, ৯ কোটি ২৯ লাখ ও ৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।’
![রাজস্ব আদায়ে ডিএসসিসি যেভাবে সফল](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)