ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:৪৯:২১ পিএম

শেখ হাসিনা শাসনামলে ৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ পাচার: অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি

৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:২২ এএম

শেখ হাসিনা শাসনামলে ৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ পাচার: অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি

ছবি: সংগ্রহীত

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৩০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মতে, আর্থিক খাতের মাধ্যমে লুটপাটের এই ঘটনা কার্যত পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই অর্থ পাচারের বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

 

 

গভর্নর আহসান মনসুরের বক্তব্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাংক খাতকে পরিকল্পিতভাবে শোষণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো এমন সব কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্বই নেই। এই অর্থের বড় অংশ দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদকে কার্যত হাইজ্যাক করা হয়েছিল।

 

 

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের লুটপাটে এস আলম গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি জড়িত ছিল। ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

 

 

আব্দুল মান্নান, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জানিয়েছেন যে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। সামরিক গোয়েন্দাদের চাপের মুখে তাকে পদত্যাগের চিঠিতে সই করতে হয়। এরপর এস আলম গোষ্ঠী ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

 

 

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাচার হওয়া এই বিপুল অর্থের প্রভাব পড়েছে দেশের মুদ্রার মান ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় আমদানি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি মুদ্রার মান পড়ে যায়। এর ফলে বিদ্যুৎ খাতে তীব্র সংকট দেখা দেয় এবং অনেক প্রতিষ্ঠান নগদ অর্থ সংকটে পড়ে।

 

 

ওষুধ কোম্পানি টেকনো ড্রাগের সহমহাব্যবস্থাপক মাজেদুল করিম জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ না পাওয়ায় তাদের কর্মীদের বেতন নগদে দিতে হচ্ছে। এই সংকট নিম্ন আয়ের কর্মীদের জন্য আরও বেশি দুঃসহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

 

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। অনেক আওয়ামী লীগ নেতার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো মামলা হয়নি।

 

 

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।

 

 

অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর মনে করেন, এই অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সহায়তা দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা স্থিতিশীল করতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই ক্ষতি থেকে উত্তরণ সহজ হবে না।

 

 

শেখ হাসিনার শাসনামলের আর্থিক কেলেঙ্কারি শুধু দেশের অর্থনীতিতে নয়, আর্থিক খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায়ও বড় ধরনের আঘাত হেনেছে।

শেখ হাসিনা শাসনামলে ৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ পাচার: অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি