ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:১৩:৫৭ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ৯:৫ এএম

অনলাইন সংস্করণ

সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ছে

২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ৯:৫ এএম

সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ছে

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো সিংহভাগ নির্ভরশীলতা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর। এ নির্ভরশীলতার কারণে জ্বালানি ব্যয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। জীবাশ্মের ওপর নির্ভরশীলতা ও জ্বালানি ব্যয় কমাতে বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরবিদ্যুতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করছে সরকার। গত দুই দশকে সৌরবিদ্যুতের বৃহৎ আকারে ব্যবহার করা না গেলেও এখন সৌরবিদ্যুৎকে কেন্দ্র করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, সৌরবিদ্যুৎ চালিত বিভিন্ন খাত তৈরি হয়েছে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতও এগিয়ে এসেছে।

 

 

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ী, দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমেই উৎপাদিত হয়। বাকি ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ বায়ুবিদ্যুৎসহ অন্যান্য শক্তির মাধ্যমে উৎপাদন হয়। সৌরবিদ্যুতের উৎসের মধ্যে রয়েছে সোলার হোম সিস্টেম, সোলার মিনি-গ্রিড, সৌর সেচ, সোলার রুফটপ, ওয়ার্কশপ, নেট মিটারিং রুফটপ সোলার প্রোগ্রাম, সোলার (সৌর) পার্ক, সোলার (সৌর) ওয়াটার হিটিং সিস্টেম, পানীয় জলের জন্য সোলার (সৌর) পাম্প ইত্যাদি।

 

 

নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ˆসৗর বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যতেও ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যেও সোলার লাইট, ফ্যান বাজারে এসেছে। অত্যন্ত জরুরি ব্যাপার হলো- সৌরভিত্তিক পণ্যের গুণগত মান ও সব ধরনের কোয়ালিটি মেইনটেন করা গেলে এ খাতের বাজার আরো বড় ও প্রসারিত হবে।’

 

 

মার্কেটসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানীকৃত কয়লানির্ভর বিদ্যুতের মেগা প্রকল্প স্থাপন দেশের জন্য অসহনীয় বোঝা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমদানীকৃত এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতাও ডলার সংকটকে উসকে দিচ্ছে। জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করতে সরকারকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে স্রেডা। ৩০ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের টার্গেট অর্জনের সুপারিশ করা হয়েছে রোডম্যাপে। এর মধ্যে ১২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ছাদভিত্তিক সোলার প্যানেল থেকে আহরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

 

 

সোলার ইন্ডাস্ট্রি খাতে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সূর্য থেকে সোলার প্যানেল আলো শোষণ করে বৈদ্যুতিক প্রবাহ উৎপন্ন করে; যা দিয়ে পরবর্তী সময়ে ডিসি তারের মাধ্যমে লাইট, ফ্যান, সুইচ ইত্যাদি চালানো যায়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় বলে এটি উৎপাদনে কোনো ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন জ্বালানি তেল, গ্যাস বা কয়লা পোড়াতে হয় না। ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড কম নির্গত হয়, যা পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আবার জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিতে যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়, তা সাশ্রয়ের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সোলার ব্যবহারে ভোক্তাদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশে ৫০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদন করা সম্ভব। সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে সেটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করে মোট বিদ্যুৎ খরচ ২০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব।

 

 

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন শুরু হয় এবং সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে সৌর প্যানেল। গত শুক্রবার সকাল ৬টায় ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও দুপুর ১২টায় তা ৪৯০ মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়ায়। এতে প্রতিদিন গড়ে ৪৫৯ মেগাওয়াট করে যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে, যা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

 

মরডর ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি অথবা বিভিন্ন প্রকল্পে সোলার ব্যবহারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ০.৫৫ গিগাওয়াট বা ৫৫০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও ২০২৯ সালের মধ্যে এ চাহিদা ২ দশমিক ৮৪ গিগাওয়াট বা ২ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে বলে প্রত্যাশা করা যাচ্ছে।

 

তাছাড়া সরকারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সোলার ও সোলার আনুষঙ্গিক পণ্যের বর্তমান বাজার চাহিদা প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত এ বাজারের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। দেশীয় কোম্পানিগুলো ৩০-৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করলেও এ বাজারের বড় অংশ এখনো আমদানিনির্ভর।

 

 

এ খাতে বিনিয়োগ করছে ওয়ালটনসহ বড় কোম্পানিগুলো। ওয়ালটন বাজারে নিয়ে এসেছে আধুনিক ও উন্নতমানের সোলার পণ্যসামগ্রী। প্রাথমিকভাবে ওয়ালটন সোলার প্যানেল, বাল্ব, টিউব, স্ট্রিট লাইট, ডিজিটাল কন্ট্রোলার, কেবলস ও ফ্যান নিয়ে বাজারে কাজ শুরু করেছে। ভোক্তাদের সুবিধা বিবেচনায় টোটাল সোলার সলিউশন প্যাকেজ নিয়ে এসেছে বাজারে। ওয়ালটনের দুটি ব্র্যান্ড এখানে কাজ করছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ওয়ালটন ও অন্যটি সেইফ ব্র্যান্ড।

ওয়ালটনের পণ্য সম্পর্কে ওয়ালটন ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সের ডেপুটি বিজনেস অফিসার ইঞ্জিনিয়ার মুজাহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌বাজারে অধিকাংশ সোলার প্যানেল নিম্নমানের। গ্রাহকদের উন্নতমানের সেবা প্রদানের জন্য আমরা মনোক্রিস্টালাইন প্রযুক্তির সোলার সরবরাহ করছি, যা অভিন্ন কালো রঙের জন্য অধিক আলো শোষণ করে অধিক বিদ্যুৎ ওয়াট উৎপন্ন করে। অ্যান্টিরিফ্লেকটিং কোটিং ও উন্নতমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের ফলে আমাদের সোলার অনেক দিন সার্ভিস দেয়। সোলার প্যানেলে আমরা ২০ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি দিচ্ছি। পাশাপাশি সোলার-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রডাক্টেও আমরা সর্বোচ্চ গুণগতমান বজায় রেখে যাচ্ছি।’

সোলার সলিউশন নিয়ে ওয়ালটন ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সের ব্র্যান্ড ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌সরবরাহের পর থেকে বাজার থেকে ক্রেতা ও পরিবেশকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি সোলারের বাজারে খুব দ্রুত ওয়ালটন এবং সেইফ ব্র্যান্ড একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করবে।’

সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ছে