ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:৫১:২৬ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১২:১৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

১২ বিলিয়ন ডলারের পরিশোধে ,সরকারের ওপর চাপ

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১২:১৭ পিএম

১২ বিলিয়ন ডলারের পরিশোধে ,সরকারের ওপর চাপ

ছবি: সংগ্রহ

দেশের ডলার সংকট তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন খাতে বিগত সরকারের আমলের নানামুখী দায় এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে দায়ের পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলারের (১ লাখ ৩৬ হাজার কেটি টাকা) বেশি। এর মধ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার চাপ রয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ তো রয়েছেই। 

 

চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের শুরুতেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রায় দেড় মাস পার হলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি।

 

 এ খাতের পরিস্থিতির উন্নয়ন না ঘটলে বড় ধরনের ডলার সংকটে পড়বে দেশ। যদিও সরকার পতনের পর বিদেশি বিনিয়োগ, ঋণ ও প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে।

 

তথ্য বলছে, গত ৩ অর্থবছরে অর্থাৎ আগের সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ডলার বাজার ঠিক রাখতে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৩৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এমনকি বিদায়ী অর্থবছরেও ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ঋণ পরিশোধের চাপ ও রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় নতুন গভর্নর ডলার বিক্রি বন্ধ করেছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের বিদেশি এলসির দায় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে ওইসব দায় এখন বেড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দায় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ কোটি ডলার। এসব দায়ের সব এখন মেয়াদ উত্তীর্ণ। যদিও আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরকারকে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা বলেন, ‘পূর্বের দায় পরিশোধে আমাদের চাপ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ কখনো খেলাপি হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। আমরা এসব দায় পরিশোধের বিষয়ে কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে বিদেশি ঋণ, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই।’

 


তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে রেমিট্যান্স গত অর্থবছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। অন্য খাতগুলোতেও ইতিবাচক ধারা রয়েছে। কিন্তু দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক না থাকায় রপ্তানি খাত কিছুটা টালমাটাল। এটাকে ঠিক করা গেলে আমরা সংকট কাটানোর পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে পারব। এ ছাড়া দেশ যাতে খেলাপি না হয়ে পড়ে এজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে আমাদের দায় পরিশোধের বিষয়টি উল্লেখ করেই সহায়তা চাওয়া হয়েছে।’

 

ডলার সংকট কাটতে কত সময় লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে তা বলা কঠিন। কিন্তু আমরা যদি ঠিকভাব কাজ করতে পারি, তাহলে সংকট ধীরে ধীরে কমে আসবে। আমরা ডলার বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছি। এখন ব্যাংক আর খোলাবাজারের পার্থক্য মাত্র ১ টাকা। এটা আমাদের জন্য পজিটিভ।’

 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ডলারের সংকট কাটাতে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা চেয়েছে। এসব ঋণ পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। যদি ঋণগুলো আসে, তাহলে সংকট কিছুটা কেটে যাবে। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়ে দেশের দায় অনেক বাড়ানো হয়েছে। এই দায় পরিশোধের চাপ ২০২৯-৩০ সাল পর্যন্ত থাকবে।’

 

তিনি বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণের সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকাই নিয়েছে বিগত সরকার। মূলত অপ্রয়োজনী প্রকল্প তৈরি, সেখান থেকে ব্যাপক হারে লুটপাট ও আর্থিক খাত থেকে অর্থ বের করে পাচারের কারণেই দেশে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।’

 

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ এলসির সবচেয়ে বেশি দায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটির দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩৬ কোটি বা (৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এলসির দায় ৫২ কোটি ডলার। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) ৪৪ কোটি ডলার। ডিরেক্টর জেনারেল ডিফেন্স পারচেজের (ডিজিডিপি) প্রায় ৩৪ কোটি ডলার। এ ছাড়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ৪ কোটি ডলারের বেশি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৪ কোটি ডলারসহ সরকারি ২০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার।

 

এদিকে দেশের রিজার্ভ সংকট কাটাতে ডলার বিক্রি বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। বাজারের ডলার সংকট কাটাতে আন্তঃব্যাংক ডলার বাজারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি সরকারি দায় পরিশোধে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ডলার ক্রয় করে সোনালী ব্যাংককে সহায়তা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১২ বিলিয়ন ডলারের পরিশোধে ,সরকারের ওপর চাপ