ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:১৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ
অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানিতে দেশের রাজস্ব হানি, ২ হাজার কোটি টাকার
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:১৩ এএম
![অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানিতে দেশের রাজস্ব হানি, ২ হাজার কোটি টাকার](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/31/20241031111035_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
গত আট বছরে ১৭টি দেশি-বিদেশি মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। দেশে বর্তমানে চার কোটি হ্যান্ডসেটের মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি দেশেই তৈরি হচ্ছে।
এছারা, বাকি দেড় কোটি হ্যান্ডসেট বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে। সরকার সব ধরনের সুবিধা দেয়ার ফলে গড়ে ওঠা এসব কারখানা দেশের সব নিয়ম মেনে হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি এসব ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী কোম্পানির বিনিয়োগ ও বাজার ঝুঁকিতে পড়ছে। কারণ উৎপাদনে নিয়ম-নীতি থাকলেও আমদানিতে কোনো নিয়ম নেই।
দেশীয় মোবাইল শিল্পের বিকাশ, নিরাপত্তা ও রাজস্ব আদায় নিশ্চিত এবং অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানি রোধে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্প্রতি এই চিঠি দেয়া হয়েছে।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে ১৭টি মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে। দেশে বছরে চার কোটি হ্যান্ডসেটের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে আড়াই কোটি হ্যান্ডসেট দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বাকি প্রায় দেড় কোটি হ্যান্ডসেট আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানি করা হ্যান্ডসেট থেকে সরকার সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় করতে পারছে না।
রাজস্ব আদায় নিশ্চিত, এই খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও জাতীয় নিরাপত্তা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন। তারা বলছেন, দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্কে সচল রয়েছে ১৯ লাখ ৭৬ হাজার আইফোন, যার মধ্যে ১৯ লাখ ৫৫ হাজারই অবৈধ। বর্তমানে অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সরকার প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
অপরদিকে এমআইওবি সভাপতি জাকারিয়া শাহিদের সই করা এনবিআর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল পরিমাণ স্থানীয় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সাল থেকে দেশে আমদানির বিকল্প হিসাবে মোবাইল ফোন সংযোজন কারখানা স্থাপন শুরু হয়। এ পর্যন্ত দেশে ১৭টি মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট কারখানা স্থাপিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি প্রায় সব প্রধান ব্যান্ড দেশে মোবাইল কারখানা স্থাপন করেছে। বর্তমানে দেশের বৈধ বাজারের প্রায় শতভাগ মোবাইল ফোনের জোগান আসে এই কারখানাগুলো থেকে।
কিন্তু উদীয়মান এই শিল্প শুরু থেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন, যা সমাধান করা জরুরি। বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারের বেশি, যার মধ্যে নারী শ্রমিক প্রায় ৩০ শতাংশ। কারখানায় চার বছরে পাঁচ কোটি হ্যান্ডসেট উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে বছরে প্রায় আড়াই কোটি হ্যান্ডসেট তৈরি হচ্ছে। দেশের মোবাইলের গ্রে বা চোরাই মার্কেটের আকার প্রায় ৪০ শতাংশ। হ্যান্ডসেট কারখানা গড়ায় ওঠায় দেশে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি (ব্যাটারি, চার্জার, অ্যাকসেরিজ ইত্যাদি) গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া মোবাইল সেট রপ্তানির মাধ্যমে দেশকে প্রযুক্তি রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এনইআইআর চালু করার কিছুদিনের মধ্যেই তা স্থগিত করে দেয়া হয়। ফোন প্রস্তুতকারকদের সংগঠন এমআইওবি, মোবাইল ফোন অপারেটর, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব অংশীজনের সঙ্গে কয়েক বছরের পর্যালোচনা শেষে সরকার ২০২১ সালে এই এনইআইআর চালু করে। এর আগে ২০২০ সালে বিটিআরসি বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয় করে এনইআইআর সিস্টেমটি ক্রয় ও স্থাপন করে।
এনইআইআর সিস্টেম না থাকায় আরও যেসব অসুবিধা হচ্ছে তা সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। গ্রাহক মানের সেট কিনে প্রতারিত হচ্ছে। অবৈধ মোবাইলের কোনো ওয়ারেন্টি নেই। অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল ফোন দিয়ে নানারকম অপরাধ সংগঠিত হয়, যা প্রতিরোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। এনইআইআর চালু করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা।
এসব বিষয় বিবেচনা করেই বহু বছরের চেষ্টায় সিস্টেমটি ২০২১ সালে চালু করা হয়। এটি চালু করার কিছুদিন আগে থেকেই অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানিকারকরা সাবধান হয়ে যায় এবং চোরাপথে মোবাইল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চালু হওয়ার পরপরই এনইআইআর বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ফলে বৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজারে বড় ধস নেমে আসে।
অবৈধভাবে ও কর ফাঁকি দিয়ে দেশে আনা হ্যান্ডসেট ব্যবহারে কোনো বাধা না থাকায় অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানি বেড়েই চলেছে। বর্তমানে মোবাইল ফোনের বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ দখল করে আছে অবৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেট। এই পণ্যের ওপর সরকার কোনো রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। বর্তমান অর্থবছরে সরকার এ খাত থেকে সম্ভাব্য দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।
অপরদিকে এনইআইআর বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবৈধ মোবাইল বন্ধ করার সুপারিশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক। সোমবার সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এই সুপারিশ করেন।
![অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানিতে দেশের রাজস্ব হানি, ২ হাজার কোটি টাকার](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)