ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:২৩:১৯ এএম

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎউন্নয়নে আয় বেড়েছে ৮১ শতাংশ

৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:২৩ এএম

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎউন্নয়নে আয় বেড়েছে ৮১ শতাংশ

ছবি: সংগ্রহ

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎউন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর আয় ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, একই সময়ে ব্যয় বেড়েছে ১৫৯ শতাংশ। আয়ের এই বিপরীতে ব্যয়ের উত্থানকে টেকসই করার জন্য সরকারকে ৪১৫ শতাংশ ভর্তুকি দিতে হয়েছে। পিডিবির আয়-ব্যয়ের এ ঘাটতি মেটাতে সরকারের ভর্তুকির চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বিদ্যুৎখাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে, বিশেষ করে বিএনপি নেতারা বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতি ও অসামঞ্জস্যতার বিষয়টি সামনে আছেন।

 

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিদ্যুৎখাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, "বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ২০২৭ সালের মধ্যে বিদ্যুৎখাতে বড় ধরনের বিপদ দেখা দিতে পারে।" তিনি উল্লেখ করেন, ক্যাপাসিটি চার্জের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ এবং সংশোধন করা প্রয়োজন। "যদি এখনই মেশিনগুলো ইনস্পেকশনের মাধ্যমে একচুয়াল ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা না যায়, তবে ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে, ।

 

 

টুকু আরও বলেন, "২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎখাতটি পুরোপুরি জনগণের চোখে ভেলকি দেখানোর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এতে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতি এবং পাচারের সূচনা হয়েছে।"

 

 

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সামগ্রিক সক্ষমতার বৃদ্ধি হতে থাকা সত্ত্বেও, উৎপাদন ব্যয় দ্রুত বেড়েছে। গত কয়েক বছরে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ, কিন্তু উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে আড়াই গুণ। এই অসামঞ্জস্যের কারণে পিডিবির আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান ছিল ১ টাকা ১ পয়সা, যা পরবর্তী বছরগুলোতে আরও বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান ৫১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পৌঁছেছে, যা একটি সর্বোচ্চ রেকর্ড।

 

 

বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও, বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য যথেষ্ট হারে বাড়েনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে, পিডিবির আয় বেড়েছে ১৯.৫৫ শতাংশ, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে ৮.১০ শতাংশ। এর ফলে পিডিবির লোকসান কিছুটা কমলেও, সরকারের ভর্তুকি প্রায় ৩৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভর্তুকি। পিডিবির উৎপাদন ব্যয়ের গড় দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ০২ পয়সা, যেখানে বিক্রির পাইকারি মূল্য ৬ টাকা ৮৮ পয়সা। এর ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ১৪ পয়সা।

 

 

পিডিবির ব্যয়ের প্রধান খাতের মধ্যে রয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ, যা বর্তমানে একটি বড় চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিগত সরকারের সময় অসংখ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র অত্যন্ত উচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জের চুক্তিতে স্থাপন করা হয়েছে, যা সরকারের ভর্তুকির চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, "বর্তমানে সরকারের উচিত এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ কমানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করা। এতে পিডিবির উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং সরকারের আর্থিক চাপও কিছুটা কমবে।"

 

 

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির খরচও পিডিবির অন্যতম বড় ব্যয়। ইজাজ হোসেন বলেন, "যেহেতু জ্বালানির ব্যবহার আবশ্যক, তবে সাশ্রয়ী ও কম খরচে জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।"

 

 

বিদ্যুৎ খাতে পিডিবির আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতা এবং সরকারের ভর্তুকির চাপ দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ের প্রধান খাতগুলো পুনর্বিন্যাস করা, ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো, এবং সাশ্রয়ী জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে এই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হতে পারে। তবে, বিষয়টি সরকারের জন্য একটি জরুরি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, যাতে আগামী বছরের মধ্যে বিদ্যুৎখাতে সংকট আরও গভীর না হয়।

 

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎউন্নয়নে আয় বেড়েছে ৮১ শতাংশ