ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:১২:১১ পিএম

তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধের মঞ্চ প্রস্তুত করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ পিএম

তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধের মঞ্চ প্রস্তুত করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ছবি: সংগ্রহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যে সর্বজনীন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধকে আরো তীব্র করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি জানান, দেশগুলো মাদকপ্রবাহ ও অভিবাসন সংকট সমাধানে পদক্ষেপ না নিলে এ শুল্ক আরোপ করা হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই এ পদক্ষেপ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

 

 

এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নয়, বৈশ্বিক বাণিজ্যকেও বিঘ্নিত করবে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের সাবেক পরিচালক কিথ রকওয়েল বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর দেশগুলোর কাছ থেকে শত শত বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। শুল্ক আরোপ করলে দেশগুলো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে, যা বাণিজ্য যুদ্ধ উসকে দেবে।’

 

 

কর্নেল ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য বিশ্লেষক এসওয়ার প্রসাদের মতে, ট্রাম্পের নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সুরক্ষাবাদের নতুন যুগ শুরু করবে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে জটিল করবে এবং ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়াবে।

 

 

মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে কানাডা, মেক্সিকো ও চীন যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর মেক্সিকো, কানাডা ও চীন তাৎক্ষণিকভাবে সমালোচনা করে এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট সবার অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছে।

 

 

আইএনজি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের গবেষণায় বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নীতিমালা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে প্রতি মার্কিন ভোক্তার বছরে ২,৪০০ ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হবে। ডয়েচে ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের ফলে ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ২.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩.৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

 

 

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে। পাশাপাশি দেশগুলোর প্রতিশোধমূলক শুল্ক নীতির কারণে মার্কিন রপ্তানিনির্ভর শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

 

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ককে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে মনে করছেন বিলিয়নেয়ার হেজ ফান্ড ম্যানেজার বিল অ্যাকম্যান। তার মতে, শুল্ক ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাম্প পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক কৌশলে প্রভাব ফেলছেন।

 

 

সমালোচনা সত্ত্বেও ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় শুল্ককে ‘সবচেয়ে সুন্দর শব্দ’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে হ্যারিস পোলের জরিপ অনুসারে, ৬৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, শুল্ক পণ্যের দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 

 

এমন পরিস্থিতিতে দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সংলাপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাণিজ্য যুদ্ধ কারো জন্যই লাভজনক নয়। একইভাবে, মেক্সিকো ও কানাডার পক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধের মঞ্চ প্রস্তুত করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প