ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৩:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
নতুন ১০ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পেও আ. লীগের সুবিধাপ্রাপ্তরা এগিয়ে
৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৩:২৭ পিএম
![নতুন ১০ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পেও আ. লীগের সুবিধাপ্রাপ্তরা এগিয়ে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/01/05/20250105151102_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৯টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রকল্পগুলো বাতিল করেছে, যার মধ্যে ৪০টি কেন্দ্র স্থাপনের জন্য নতুন অনুমতি দেওয়া হবে। সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দরপত্র আহ্বান করা হলেও, শর্তের কারণে বিগত সময়ে সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই এগিয়ে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১০টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য গত ডিসেম্বরে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে এই দরপত্রের শর্তগুলো অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে একটির জন্য ১০০ থেকে ১৫০ একর জমি এবং দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার শর্ত রয়েছে, যা নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পূরণ করা বেশ কঠিন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এই শর্তের কারণে বিদ্যুৎ খাতে সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আবারো এগিয়ে আসবে। বিশেষত, ওই সব প্রতিষ্ঠান যেগুলোর জমি আগে থেকেই রয়েছে এবং যেগুলো বিগত সরকারের সময় অনুমতির শেষ পর্যায়ে ছিল। ফলে, নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবেশের সুযোগ কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে গুঞ্জন রয়েছে, বিগত সরকারের সময় সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প পাইয়ে দিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আলোচনা করছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান মূলত বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী ছিল।
প্রতি মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৩ একর জমি প্রয়োজন, এবং ৩০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৯০ একর জমি থাকা আবশ্যক। এর পাশাপাশি, প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে হলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) উপকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে জমি থাকতে হবে। তবে পিডিবি-এর প্রকৌশলীরা বলছেন, নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি এবং আগের প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই বড় অংশ জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে কিছু সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। এসব প্রকল্পের জন্য জমি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত ছিল, ফলে বর্তমান শর্তের অধীনে এসব প্রতিষ্ঠানই ফের দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য অগ্রাধিকার পাবে।
চট্টগ্রামের রাউজান ও কক্সবাজারের টেকনাফ-এ আগের অনুমতির ভিত্তিতে কিছু প্রতিষ্ঠানই অংশ নেবে, কারণ তাদের কাছে জমি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকেই ছিল।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা
এছাড়া, সরকারি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে, যেগুলোর অভিজ্ঞতা এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তারা এই দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত বিদেশি কোম্পানির সাথে যৌথ উদ্যোগে এই অভিজ্ঞতা পূর্ণ করে অংশ নিতো। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের একে অপরের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা পূর্ণ করার সুযোগ নেই।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় অনেক কম হলেও, বাংলাদেশে এটি অনেক বেশি। যেমন, ভারত এবং পাকিস্তানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় গড়ে ৫.৩ সেন্ট ও ৩.২ সেন্ট প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা, যেখানে বাংলাদেশে এই ব্যয় ১১ সেন্ট থেকে ১৯ সেন্ট পর্যন্ত থাকে। নতুন ১০টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমোদিত চুক্তিতে উৎপাদন ব্যয় ৯ থেকে ১০ সেন্ট এর মধ্যে হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেছেন, “সিন্ডিকেট মুক্ত না হলে এই পরিবর্তনগুলো কার্যকর হবে না। দরপত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখতে হবে, না হলে সবকিছু আগের মতো চলবে।”
এছাড়া, বিদ্যুৎ খাতে আরো সুযোগ তৈরি না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের ভার বাংলাদেশের জনগণের ওপরই চাপবে, যা পরিস্থিতি আরও সংকটমুক্ত হবে না।
এতে স্পষ্ট যে, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে, এবং সরকারের উচিত হবে এই প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়া গ্রহণ করা, যাতে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান সুযোগ পায়।
- ট্যাগ সমূহঃ
- সৌরবিদ্যুৎ
- প্রকল্পেও
- সুবিধাপ্রাপ্তরা
- এগিয়ে
![নতুন ১০ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পেও আ. লীগের সুবিধাপ্রাপ্তরা এগিয়ে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)