ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১১:৩২:৩৭ এএম

বিগত সরকার আমলে জুলুম করে নেওয়া হয়েছিল ৪০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের টাকা

৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:২১ এএম

বিগত সরকার আমলে জুলুম করে নেওয়া হয়েছিল ৪০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের টাকা

ছবি: সংগ্রহ

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বেআইনিভাবে নেওয়া এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে এখনও পড়ে আছে। দেশের উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। আপিল ও রিভিউয়ের পর আবার আপিল আবেদন-আইনের এই সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স (টিএফআই) কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন। এই টাকা দুই শতাধিক পে অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়।



জানা গেছে, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল জেমস ফিনলের কাছ থেকে আদায় করে ১১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ওই টাকা ১৬টি পে অর্ডারে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কনসোলিডেটেড ফান্ডে প্রথম জমা দেওয়া হয়। এরপর ২২ এপ্রিল একই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫টি পে অর্ডারের মাধ্যমে আরো ১২০ কোটি ২৪ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়। একই প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে দেড় বছর ধরে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের সংশ্লিষ্ট হিসাবে টাকা জমা হয়েছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় ছাড়াও ‘অজানা’ উল্লেখ করেও চার দফায় প্রায় ৪৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে।

 

২০০৭ সালের ১৯ জুন থেকে একই বছরের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মিসেস পারভীন হক সিকদার বাধ্য হয়ে সিকদার গ্রুপের পরিচালক ও সদস্যদের পক্ষ থেকে ৯টি পে অর্ডারের মাধ্যমে মোট ৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করেন বলে জানা গেছে।

 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরও যাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের ৩০ কোটি, এমজিএইচ গ্রুপের ২৪ কোটি, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের ২০ কোটি, কবির স্টিলের সাত কোটি, ব্যবসায়ী নূর আলীর ৪০ কোটি ৫০ লাখ, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি ৫০ লাখ, সাগুফতা হাউজিংয়ের দুই কোটি ৫০ লাখ, হোসাফ গ্রুপের ১৫ কোটি, পারটেক্স গ্রুপের ১৫ কোটি, স্বদেশ প্রপার্টিজের ৯ কোটি, ইসলাম গ্রুপের ৩৫ কোটি, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আট কোটি, ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের ১৭ কোটি, আবু সুফিয়ানের ১৪ কোটি, শওকত আলী চৌধুরীর ছয় কোটি, আশিয়ান সিটির এক কোটি, পিংক সিটির ছয় কোটি ৪১ লাখ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ১৯ কোটি ৪৫ লাখ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের ১৫ কোটি, ওয়াকিল আহমেদের ১৬ কোটি, এবি ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি, গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ২০ কোটি ৪১ লাখ, এলিট পেইন্টের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ, এবি ব্যাংকের ১৯০ কোটি, কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের সাত কোটি, জনৈক মালিকের চার কোটি এবং ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর দুই কোটি ২০ লাখ টাকা।

 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার অন্যায়ভাবে আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী প্রক্রিয়ায় টাকাগুলো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের ওই টাকা ফেরত দিয়ে সরকারের উচিত আদালতের নির্দেশনা মানা। একই সঙ্গে যারা টাকা নিয়েছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত।

বিগত সরকার আমলে জুলুম করে নেওয়া হয়েছিল ৪০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের টাকা