ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৪৯:০৭ এএম

ভূরাজনীতিতে সরকারের শত দিন ও কদম আলী: মোঃ আলীমুজ্জামান

২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:৫৩ এএম

ভূরাজনীতিতে সরকারের শত দিন ও কদম আলী: মোঃ আলীমুজ্জামান

ছবি: ভ্যাটবন্ধু নিউজ

আমি কদম আলিকে সতর্ক করে বললাম, আলোচনা হবে শুধুমাত্র অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে। কোনো রাজনৈতিক প্রসঙ্গ স্থান পাবে না। কদম আলি হেসে বলল, "অর্থনীতি, রাজনীতি, ও পররাষ্ট্রনীতি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করতে হলে রাজনীতি বাদ দেওয়া মানে হচ্ছে ‘নোটে গাছটি মরালো, আলোচনাটি ফুরালো।’"

 

সরকারের শুরুতে ভারতবিরোধী মনোভাবের কারণে বিদেশি প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কথার ফুলঝুরি ছড়ানো হয়েছিল। কিন্তু হানিমুন পিরিয়ডেও টাইফুনের মতো আঘাত আসে—আমেরিকার নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের পরাজয়।

 

 

আমি বললাম, সরকারের প্রথম ১০০ দিনে প্রধান উপদেষ্টার বন্ধু হারানোর মূল কারণ সম্ভবত চীনের সাথে ঋণের সুদের হার ৩% থেকে কমিয়ে ২% করা এবং পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে ২৫ বছর করার প্রস্তাব। আর্থিক সঙ্কট কাটাতে চীনের কাছে নতুন করে ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চাওয়া হয়। কিন্তু চীন আগের ঋণের প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড় বন্ধ করে দেয়।

 

 

ভারতবিরোধী মনোভাব এবং সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে দেশের স্বার্থ রক্ষা না হওয়ার অভিযোগে কিছু প্রকল্প পুনঃবিবেচনার দাবি ওঠে। এর ফলে, চীনা প্রকল্পগুলোতে কর্মরত লোকবল নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে চলে যায়। সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতেও কাজ পুনরায় শুরু করা সম্ভব হয়নি।

 

 

কদম আলি যোগ করল, জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা সার্ক পুনর্জাগরণের চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের কোনো জোটে থাকার বিষয়ে তারা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। দুর্বল অর্থনীতির দেশ পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হলেও ভারতকে বাদ দেওয়া হয়।

আইএমএফ-এর ঋণ পাওয়ার শর্তে পাকিস্তান ১.৬০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ছাঁটাই এবং রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিক্রির টেন্ডার ঘোষণা করে। সেখান থেকে পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করার বিষয়টি ভারত ভালো চোখে দেখে না।

 

 

বঙ্গোপসাগরে খনিজ অনুসন্ধানের জন্য রাশিয়া ও আমেরিকাকে ১০টি ব্লক লিজ দেওয়া হয়েছিল। পরে রাশিয়ার চুক্তি বাতিল করে আমেরিকারটা বহাল রাখা হয়। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে ৫০০ কোটি ডলারের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। রাশিয়া এই অভিযোগ আন্তর্জাতিক আদালতে চ্যালেঞ্জ করার হুমকি দেয় এবং ঋণের কিস্তি ও সুদসহ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের শর্তে প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখে।

 

 

আমি বললাম, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ জাপান করছিল। দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তারা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। বর্তমানে তাদের প্রকল্পগুলো ধীরগতিতে চলছে।

 

 

আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে আসা বিদ্যুতের পাওনা বাবদ ৯০ কোটি ডলার পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করা হয়েছে। ভারত এই বিল পরিশোধে ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সরকার পরিবর্তনের পর তা স্থগিত করে।

 

 

কদম আলি আরও বলল, ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিসের মানদণ্ডে বাংলাদেশের ঋণ প্রাপ্তির রেটিং বি-১ থেকে বি-২-এ নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, জিডিপি ৬.৭% এর পরিবর্তে ৪.৫% হতে পারে। যদি অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা দ্রুত ফিরে না আসে, তবে জিডিপি ২-৩% পর্যন্ত নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

 

আমি বললাম, রপ্তানি শিল্পে শ্রমিকদের আন্দোলন, সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা, অটোরিকশা বন্ধের আদেশ, এবং শিক্ষার্থীদের দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূরাজনীতিতে কূটনৈতিক অদক্ষতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

 

 

কদম আলি একদম পরিষ্কারভাবে বলল, "বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে সরকার মূলত নিজেদের পতনের ভীতি থেকে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটি প্রতিহত করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। প্রবাদের মতোই ‘বনের বাঘে নয়, মনের বাঘে খায়’। যদি ভয় দূর না হয়, তবে ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়।"

 

 

আমি হেসে বললাম, "রোবট হিসাবে বিচার না হওয়ার ইন্ডেমনিটি পেয়েছ তো! তাই কার কণ্ঠ কার সাথে জুড়ে অডিও ফাঁস করেও পার পেয়ে যাচ্ছ। কিন্তু রোবটিক বিচার অধ্যাদেশ জারি হলে সাহস কোথায় যায়, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব।

ভূরাজনীতিতে সরকারের শত দিন ও কদম আলী: মোঃ আলীমুজ্জামান