ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৫৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ
সরকারি হিসাবে ডিমের উৎপাদন ৩০% বেশি
৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৫৫ এএম
![সরকারি হিসাবে ডিমের উৎপাদন ৩০% বেশি](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/08/20241008105529_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
সরকারি হিসাবে দেশে বছরে ডিমের উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৯৭ লাখ পিস। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৮০৯ কোটি ৬০ লাখ পিস। এ হিসাবে চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত থাকছে ৩০ শতাংশ।
অথচ, ব্যবসায়ীরা উৎপাদনের সংকট দেখিয়ে প্রতিদিনই বাড়াচ্ছেন ডিমের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি বেড়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত। খোলাবাজারে এখন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গতকাল ফার্মের ডিমের হালি বিক্রি হয় ৫৮-৬০ টাকা করে। যদিও সরকার নির্ধারিত দামে নিত্যপণ্যটি সর্বোচ্চ দাম হওয়ার কথা ৪৮ টাকা। গত সপ্তাহেও এসব ডিমের হালি ছিল ৫৫ টাকা করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও দাম বাড়ছে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে পদক্ষেপ নেয়া গেলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। আবার সবজি, মাছ ও মাংসের দাম বাড়ার প্রভাব ডিমের ওপর পড়েছে বলেও মনে করেন তারা।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘সরকার চুপ থাকায় ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে বাজার অস্থির করছেন। নতুন সরকারের প্রথম দুই সপ্তাহে অবশ্য দাম বাড়েনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাজারে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় দাম বাড়তে থাকে।’
দেশে বর্তমানে দৈনিক সাড়ে চার কোটি ডিমের চাহিদা থাকলেও চার কোটি পিস উৎপাদন হচ্ছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। অথচ সরকারি হিসাবে উৎপাদন হচ্ছে চাহিদার চেয়েও বেশি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ডিমের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৮০৯ কোটি ৬০ লাখ পিস। বিপরীতে উৎপাদিত হয় ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৯৭ লাখ। উদ্বৃত্ত থাকে ৫৬৫ কোটি ৩৭ লাখ পিস ডিম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চাহিদা ছিল ১ হাজার ৮০৬ কোটি ৪৮ লাখ, উৎপাদিত হয়েছে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৩ লাখ পিস। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ৫৩১ কোটি ১৫ লাখ পিস।
এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) উদ্বৃত্ত থাকে ৫৭৬ কোটি ৬৭ লাখ পিস, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯১ কোটি ৭২ লাখ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩ কোটি ৭৯ লাখ পিস ডিম। অর্থাৎ কয়েক বছর ধরেই চাহিদার তুলনায় ডিমের উৎপাদন বেশি।
ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করছে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। এ বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি আমান উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের তেজগাঁও থেকে দিনে মাত্র ১৪-১৫ লাখ ডিম সরবরাহ করা হয়। কাজেই এখান থেকে দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই। আমরা মেসেজের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করি না। কেউ এমনটা করে থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে।’
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘এখন বৃষ্টির সময়, এ সময় ডিমের চাহিদা এমনিতেই বেশি থাকে। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে অনেকে ফার্ম থেকে ডিম সরবরাহ করতে পারেননি। তবে আগামী দু-এক মাসে বাজারে শীতের সবজি এলে ডিমের দাম কমে আসবে।’
চাহিদার তুলনায় গত কয়েক অর্থবছরে বেশি উৎপাদন হওয়ার পরও দিন দিন বেড়েছে ডিমের দাম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক খুচরা বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের বাজারে ডিম বিক্রি হয়েছে ২৭ থেকে ৩০ টাকা হালি। ২০২২ সালের মে মাসে এসে হালিপ্রতি দাম দাঁড়ায় ৩৭ থেকে ৪২ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বরের বাজারমূল্যের তালিকায় দেখা যায়, প্রতি হালি ডিম ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও দাম নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার পেছনে বাজার ব্যবস্থাপনার বড় সমস্যা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে মনিটরিং জোরদারের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বাপন দে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতি পিস ডিমে নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। কারণ বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক না। ছয়-সাতবার ডিম হাতবদল হচ্ছে। আর প্রতিজনই লাভ নিচ্ছেন। ফলে উৎপাদনকারী কম লাভ পাচ্ছেন, কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়ে যাচ্ছে।
ডিমসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে বন্যাকে সামনে আনছেন ব্যবসায়ীরা। সাম্প্রতিক এ বন্যা নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বন্যায় দেশে ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে মোট ক্ষতির মধ্যে পোলট্রি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বাজার বিশ্লেষকরাও বলছেন, বন্যায় পোলট্রি খাতের কিছুটা ক্ষতি হলেও তা সারা দেশে প্রভাব ফেলার মতো ছিল না।
বাজারে ডিমের যৌক্তিক দর নির্ধারণের কাজটি সম্পাদন করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের কোনো ঘাটতি আছে বলে মনে করি না। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য নিয়েই আমরা দাম নির্ধারণ করেছি। তবে দাম কেন মানা হচ্ছে না তা জানার জন্য আজ মঙ্গলবার আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসব।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে ইলিশের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। এখন ডিমের বাজারও বেসামাল। একটি ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম আমিষ থাকে। যার বাজারমূল্য গতকাল ছিল ১৪-১৫ টাকা। ফলে সাধারণ মানুষের আমিষের জোগানেও টান লেগেছে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। পরে তাকে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।
![সরকারি হিসাবে ডিমের উৎপাদন ৩০% বেশি](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)